দেবশ্রী মজুমদার, নানুর: ঠিকানা নেই। আস্তানা একটা আছে। সেটা অজয় নদের উপর বাঁধ আর মাথার উপরে খোলা আকাশ। তা বলে কি পুজো হবে না? না হওয়ার দিকেই পাল্লা ছিল ভারি। কারণ কদিন আগেই নানুরের সুন্দরপুরে অজয় নদের বাঁধ ভাঙা স্রোত কেড়ে নিয়েছে সব। আজ তারা বানভাসি। রিলিফ ক্যাম্পে কাটছে দিন।
তবে সুন্দরপুরের আশেপাশের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রামের মানুষের ভিতরে কোথাও যেন কষ্ট অনুভব হয়েছে। তাই তারা জোট বেধেছে। তারা বলেছেন, ধর্মীয় কারণে আমরা সরাসরি পুজোর মধ্যে কোনভাবেই অংশগ্রহণ করতে পারব না। তবে পাশে আছি। অর্থের যোগানের অভাব হবে না। আপনারা পুজো করুন।
এই হল আমাদের বাংলা। যেখানে ধর্মীয় সহিষ্ণুতাই প্রথম ও শেষ কথা। সব হারানো মানুষদের উৎসবের আনন্দ দিতে তাই বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ধ্বংসের পর যেন সৃষ্টির ছোঁয়া। গ্রামের মন্দির দেবস্থান, তাদের আজ কোনও চিহ্ন নেই। স্বাভাবিকভাবেই চারদিকে হাহাকার। এমতাবস্থায় পুজোর আনন্দ যেন অলীক কল্পনা।
কিন্তু সেই কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে উদ্যোগী হয়েছে নানুর বিধানসভা কেন্দ্রের থুপসারা গ্রাম পঞ্চায়েত এবং বীরভূম জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আবদুল কেরিম খান।
আবদুল কেরিম খান বলেন, “এত বড় উৎসবে সুন্দরপুরের মানুষ যোগ দেবে না সেটা হতে পারে না। আমরা সুন্দরভাবে দুর্গাপুজো করার যাবতীয় উদ্যোগ নিয়েছি। মণ্ডপ, প্রতিমা, আলো, পুরোহিতমশাই, ঢাক সব ব্যবস্থাই হয়ে গেছে। সারা রাজ্যের সঙ্গে এরাও পুজোতে মাতবে। আশেপাশের অন্যান্য পুজোর থেকে অনেক উৎসব মুখর হবে এই পুজো। সব খরচ আমরাই বহন করব।”
তাই তাদের উদ্যোগেই দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়েছে অজয় নদের বাঁধের পাশেই। মন্ডপ তৈরির কাজ প্রায় শেষ। থুপসারা গ্রামের পালপাড়াতে জরুরি ভিত্তিতে অর্ডার দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সুন্দর দেবী প্রতিমা। সেটাও আজ-কাল করে পৌঁছে যাবে ওই মণ্ডপে। আলোকসজ্জা দিয়ে সাজিয়ে তোলা হবে গ্রাম ঢোকার রাস্তা থেকে দুর্গামণ্ডপ। পর্যন্ত পুরো রাস্তা ও দুই ধারের জায়গা। দুঃখের সমস্ত চিহ্ন মুছে দিয়ে গ্রামবাসীদের, বিশেষ করে বাচ্চাদের, দুর্গাপুজোর আনন্দ দিতে কোনও কসুর ও কার্পণ্য রাখছে না
আবদুল কেরিম খান ও তার সঙ্গীরা।
যাবতীয় খরচা বহন করছেন তাঁরাই। উদ্দেশ্য সুন্দরপুর গ্রামের সব হারানো মানুষদের জীবন আবার সুন্দর হয়ে উঠুক। সবার মুখে হাসি ফুটুক উৎসবের দিনগুলোতে।