উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়নগর: আবার বিপদের মুখে সুন্দরবনের চাষিরা। আয়লা, বুলবুল, আমফান, ইয়াসের পর এবার রেমালের অশনিসঙ্কেত! রবিবার দুপুরের পর থেকেই তার দাপট টের পাওয়া যাবে এবং রাতেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরের কাছাকাছি কোনও এলাকায় ওই প্রবল ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। ইতিমধ্যে রবিবার সকাল থেকে শুরু হয়ে গেছে ঝড়ের দাপট ও সাথে প্রবল বৃষ্টি। এই দুর্যোগের প্রভাব শুধু এই জেলাতেই নয়, পড়বে অন্যত্রও। এই জেলায় মাঠের ফসল বাঁচাতে বৃহস্পতিবার থেকে চাষিদের সতর্ক করা শুরু করেছে কৃষি দফতর। কিন্তু এত অল্প সময়ের মধ্যে কী ভাবে ফসল ঘরে তোলা সম্ভব, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন বহু চাষি। এই মুহূর্তে জেলার ভাঙড়, জীবনতলা, ক্যানিং, রায়দীঘি, জয়নগর, কুলতলি-সহ বিভিন্ন এলাকায় মাঠ ভর্তি ধান, বেগুন, পটল, উচ্ছে, ঝিঙে, লাউ, কুমড়ো-সহ বিভিন্ন আনাজ রয়েছে। শসা, আম, জাম, পেঁপে, কাঁঠালের মতো ফলও পেকে উঠেছে। ফলে,এই দুর্যোগে তাঁরা বড় রকম ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলে আশঙ্কা চাষিদের। জেলা উদ্যানপালন দফতর ও জেলা কৃষি দফতরের পক্ষ থেকে চাষিদের জন্য লিফলেট ও বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বার্তা দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, অতি দ্রুত পাকা ধান কেটে নেওয়ার জন্য। যে সব আনাজ তোলা বা কেটে ফেলার উপযোগী হয়েছে, তাও দ্রুত মাঠ থেকে তুলে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আনাজ খেত থেকে দ্রুত জল বের করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। পানের বরজ, কলা বা পেঁপে গাছ ঝড়-বৃষ্টিতে যাতে ভেঙে না পড়ে, সে জন্য বাঁশ বা লাঠির সঙ্গে শক্ত করে বাঁধন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আনাজের মাচা শক্ত করে বেঁধে রাখার কথা বলা হয়েছে। বজ্রপাতের সময় চাষিরা যাতে মাঠে না যান, সে জন্য নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে। আবহাওয়ার উন্নতি হলে প্রয়োজনে কৃষি দফতরের পরামর্শ মেনে ফসলে ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।জেলা উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন আনাজ চাষ হয়।
দফতরের উপ-অধিকর্তা কৌশিক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সরকারি ভাবে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চাষিদের কী করণীয়, তার একটা নির্দেশিকাও দেওয়া হয়েছে। আমরা দফতরের পক্ষে পুরো বিষয়টির উপর নজর রাখছি।’’ জেলা পরিষদের কৃষি ও সেচ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ বাহারুল ইসলাম বলেন, ‘‘চাষিদের সতর্ক থাকতে বলেছি। যে সব ফসল কাটার উপযোগী হয়েছে, তা দ্রুত ঘরে তোলার জন্য বলা হয়েছে।’’
জয়নগরের কয়েকজন চাষি বলেন, এত অল্প সময়ের মধ্যে কী ভাবে ফসল কেটে ঘরে তুলব বুঝতে পারছি না। জনমজুর পাওয়া যাচ্ছে না। বাড়তি টাকা দিয়েও লোকজন পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে। কুলতলির মৈপীঠের এক চাষির কথাশ, আমার প্রায় এক বিঘা জমিতে ধান রয়েছে। আর কয়েক দিন পরে কাটতে পারলে ভাল হত। কিন্তু আবহাওয়ার যা অবস্থা, তাতে কৃষি দফতরের কথামতো অল্প সময়ের মধ্যে ধান কাটার লোক পাচ্ছি না। তার উপর ধান ঝাড়ার যন্ত্রের যা ভাড়া চাওয়া হচ্ছে, তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কী করব, বুঝতে পারছি না। সব মিলিয়ে করুণ অবস্থায় সুন্দরবনের চাষিরা।