জেনেভা, ২৪ মে: ১৯৯৫ সালে বসনিয়ায় সংঘটিত স্রেব্রেনিকা গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে ১১ জুলাই দিনটিকে ‘সেব্রেনিকা গণহত্যা স্মরণ দিবস’ ঘোষণা করল রাষ্ট্রসংঘ। রাষ্ট্রসংঘের সদস্য দেশগুলির ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ৩ দশক আগের ওই গণহত্যায় বসনিয়ার আট হাজার মুসলিমকে হত্যা করেছিল সার্বিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা বসনিয়ান-সার্ব বাহিনী। রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদে জার্মানি ও রুয়ান্ডার পক্ষ থেকে প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হয়। সার্বিয়া এ প্রস্তাবের ব্যাপক বিরোধিতা করলেও শেষ পর্যন্ত সদস্যদের ভোটে প্রস্তাবটি পাস হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের এ প্রস্তাবকে ‘পলিটিসাইজড’ বলে অভিহিত করেছেন সার্ব রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার ভুসিচ। তার দাবি, এর ফলে পুরো সার্বিয়া ও সার্বদের গণহত্যাকারী হিসেবে দেখানো হবে। ‘১৯৯৫ সালের স্রেব্রেনিকা গণহত্যার স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস’ চালুর পক্ষে রাষ্ট্রসংঘে ভোট দেয় ৮৪টি সদস্য রাষ্ট্র। প্রস্তাবের বিপক্ষে পড়ে ১৯টি ভোট। ৬৮টি দেশ ভোটদান থেকে বিরত ছিল। ফলে প্রস্তাবটি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস হয়। উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালে বসনিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় স্রেব্রেনিকা রাষ্ট্রসংঘ ঘোষিত ‘সেফ এরিয়া’ বা নিরাপদ অঞ্চল হিসেবে শান্তিরক্ষীদের তত্ত্বাবধানে ছিল। তা সত্ত্বেও এ অঞ্চলে বর্বর হামলা চালায় সার্ব বাহিনী। সার্ব কমান্ডার রাটকো ম্লাদিচের নির্দেশে বসনিয়ার আট হাজার মুসলিমকে হত্যা করা হয়। এরপরও থেমে থাকেনি নৃশংসতা। পরবর্তীতে সার্ব বাহিনীর সদস্যরা নিহতদের গণকবরগুলো পুনরায় খোঁড়ে। গণহত্যাকে ধামাচাপা দিতে দেহাবশেষগুলোকে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয় তারা। ফলে একেকজনের শরীরের অংশগুলো বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে পড়ে। ভুক্তভোগীদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে যায়। সেই গণহত্যার এতদিন পরও বসনিয়ার বিভিন্ন স্থান থেকে কঙ্কাল পাওয়া যাচ্ছে। নতুন করে পোটোকারি সিমেট্রিতে কবর দেওয়া হয়েছে তাদের। দ্য ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন মিসিং পারসনসের সহায়তায় ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিহতদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৭ হাজার জনকে শনাক্ত করা গেছে। রাষ্ট্রসংঘের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে সংস্থাটি বিবৃতিতে বলেছে, দিবসটি ব্যক্তি, পরিবার ও সম্প্রদায়ের ওপর গণহত্যার স্থায়ী ক্ষতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত স্রেব্রেনিকা গণহত্যার শিকার মানুষগুলোকে স্বীকৃতি ও শ্রদ্ধা জানানোর ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে থাকবে।