পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: দেশে ১৮ তম লোকসভা নির্বাচন চলছে। এবারের নির্বাচন ৭ দফার। ইতিমধ্যেই তিন দফার ভোট সম্পন্ন হয়েছে। তৃতীয় দফার ভোটের পর একদিকে বিরোধী পক্ষ যেমন দাবি করছে তারাই এগিয়ে, উলটোদিকে নরেন্দ্র মোদি তৃতীয়বার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসছে বলে দাবি করছে শাসকপক্ষও। গেরুয়া শিবির দিল্লি দখলে মরিয়া। তাই আগেই খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘অব কি বার, ৪০০ পার’ স্লোগান ভোট বাজারে উড়িয়ে দিয়েছেন। ভাবখানা এমন যেন, জিত তাদের হাতের মুঠোয়।
শুধু তাদের শিবিরে কত বেশি সংখ্যক আসন আসবে, তার হিসেব-নিকেশ বাকি। লোকসভা নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও শাসকদলের ভাগ্য নির্ধারণের প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু অতীতে এমন ঘটনাও দেখা গেছে যখন, লোকসভার সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও অতীতে অনেকেই প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। এই তালিকায় অনেক প্রবীণ এবং নামজাদারা রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রধান শর্ত হল, প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থীকে লোকসভা বা রাজ্যসভার সদস্য হতে হবে। সেই সুযোগে এমন অনেক প্রবীণ নেতা যারা লোকসভার সদস্য না হয়েও রাজ্যসভার মাধ্যমে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ, কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে দশ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এটা একটা রেকর্ডও বটে। কারণ এতটা দীর্ঘ সময় জুড়ে রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে কেউ এতদিন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না।
দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির নামেও একটি রেকর্ড রয়েছে। তিনিই প্রথম নেত্রী যিনি লোকসভা সাংসদ না হয়েও দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। ১৯৬৬ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যু হয়। তখন ইন্দিরা গান্ধি রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন। লালবাহাদুর শাস্ত্রীর শূন্যপদ পূরণে দলের অনুমতিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন। এরপর, ১৯৬৭ সালে তিনি লোকসভা নির্বাচনে জিতে লোকসভায় পৌঁছেছিলেন।
এছাড়া এইচডি দেবগৌড়াও রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়া ছিলেন দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। ১৯৯৬ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর তিনি প্রথম যুক্তফ্রন্ট সরকারের নেতৃত্ব দেন। প্রায় এক বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন দেবগৌড়া। এরপর যুক্তফ্রন্টের দলগুলোর মধ্যে যখন পারস্পরিক সমঝোতা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়, আলোচনার মাধ্যমে তখন যুক্তফ্রন্টের সদস্যরা দেবগৌড়ার নাম নিয়ে একমত হন।
দেবগৌড়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর রাজ্যসভার সদস্য হন, কারণ এর আগে তিনি কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সেই সময়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী করার বিষয়ে একমত হয়েছিল জোটের নেতারা। কিন্তু বাম দলগুলি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নের সলিল সমাধি হয়।
এইচডি দেবগৌড়া সরকারের পতনের পর, ইন্দ্রকুমার গুজরালকে দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী করা হয়। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে, তিনি রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন এবং দেবগৌড়া সরকারের মন্ত্রীও ছিলেন। গুজরাল যখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন, তখন তিনি রাজ্যসভায় প্রতিনিধিত্ব করছিলেন।
গুজরালের পরে, রাজ্যসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়া চতুর্থ নেতা ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং। দশ বছর রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন তিনি। রাজ্যসভার সদস্য থাকাকালীন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রেকর্ডও ছিল তাঁর। তিনি ২০০৪ সালে ইউপিএ সরকারের দায়িত্ব নেন এবং ২০১৪ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। মজার বিষয় হল ১৫ তম লোকসভার নির্বাচনে অর্থাৎ ২০০৯-এর নির্বাচনে কংগ্রেস মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল, কিন্তু তিনি নিজে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি।