পুবের কলম প্রতিবেদক, বসিরহাট: এ যেন হাড় হিম করা সিনেমার থ্রিলার। নাবালক খুনির এমনই মোটিভ দেখে শিউরে উঠেছে গ্রামের মানুষ। গত এক বছরে রহস্যময় দুটি খুন ও আরো একটি শিশুকে খুনের চেষ্টা করে আতঙ্কের আবহ তৈরি করে দিয়েছে গোটা গ্রাম জুড়ে। কখনো বাথরুমের দরজা বন্ধ করে, কখনো জলের মধ্যে শ্বাসরোধ করে খুন। আবার কখনো গাড়ি চাপা দিয়ে খুনের চেষ্টা। সবকটি খুনের লক্ষ্য তার সমবয়সী বা ছোটশিশুদের। এরকম একাধিক খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হল বছর ১৫র আব্দুল রোহিত সরদারকে।
উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার সাকচুড়া বাগুন্ডি গ্রাম পঞ্চায়েতের হরিহরপুর গ্রামের হাড় হিম করা এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকাবাসীর মনে। বুধবার আদালতের নির্দেশে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে কবর থেকে তোলা হলো সর্বশেষ মৃত আমির হোসেন নামে এক নাবালকের দেহ।
জানা যায়, ২৯ এপ্রিল সোমবার বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ বছর ১৪ র আমির হোসেন গাজীকে রোহিত সরদার প্লান করে ডেকে নিয়ে যায়। হরিহরপুর গ্রামের ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তে নদীর ধারে বিএসএফের চেক পোস্ট এর পাশে একটি অস্থায়ী বাথরুমের মধ্যে খেলার ছলে আমির হোসেন গাজীকে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে শিকল তুলে দেয়। ওই এলাকায় তখন বিএসএফের টহলদারিতে কেউ ছিল না। তারপরে দীর্ঘক্ষণ কেটে যায়। আমির হোসেনের মা বাড়ির লোকজন খোঁজাখুঁজি করতে থাকলে তার আর খোঁজ পায়না। পরে জানা যায় সেসময় ওই বাথরুমের কাছে ছোট্ট বোন তানিয়া সুলতানা খেলতে গিয়ে এই ঘটনা জানতে পারে। সে দাদার গলার আওয়াজ শুনে বাথরুমের দরজা খুলে দিতে যাচ্ছিল। তখন রোহিত সরদার বলে তুই এখান থেকে চলে যা। না হলে তোকেও মেরে গাঙে ফেলে দেবো। সেসময় তানিয়া ভয়ে বাড়িতে চলে আসে। ভয়ে বাড়ির পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কিছু বলতে পারেনি। প্রতিবেশী আমির হোসেনকে তার মা খোঁজ করে না পেয়ে রোহিত সর্দারকে জিজ্ঞাসা করে। তখন রোহিত সরদার জানায় আমির হোসেনকে দক্ষিণ বাগুন্ডি হাই স্কুলের একটি বাথরুমে বন্ধ করা আছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে বেলা গড়িয়ে বিকেল হলেও তার সন্ধান মেলেনি। বেলা সাড়ে চারটা নাগাদ গ্রামবাসীরা রোহিতকে চাপ দিলে সে নিজে গিয়ে বিএসএফের বাথরুমের দরজা খুলে দেখে আমির হোসেন মারা গেছে। তারপর রোহিত ওখান থেকে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বসিরহাট থানার পুলিশ। তদন্ত নেমে রোহিত সরদারকে গ্রেফতার করে। বুধবার তাকে জুভেনাইল কোর্টে তোলা হয়। বিচারক মৃতদেহটি কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত করার নির্দেশ দেন। এদিন গ্রামবাসীদের উপস্থিতিতে ম্যাজিস্ট্রেটকে সামনে রেখে কবর খুঁড়ে দেহটি তোলা হয়। পুলিশ জানায় ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে আসল রহস্য।
মৃতের আত্মীয় মরিয়ম বিবি জানান, রোহিত সরদারই আমির হোসেনকে মার্ডার করেছে। বছর দেড়েক আগে আমার এক আত্মীয়ের ছেলেকেও পুকুরে ফেলে দিয়ে ডুবিয়ে মেরেছে। কয়েকদিন আগে একটি ছোট্ট মেয়েকে সাইকেল চাপা দিয়ে মারার চেষ্টা করে। তার হাত পা ভেঙ্গে যায়। তিনি আরো বলেন ওর মধ্যে মানুষকে খুন করার একটা প্রবণতা এসে গেছে। এমনকি ডাকাতদের মতো তার আচরণ। গ্রামবাসীরা রোহিত সরদারের উপযুক্ত শাস্তি ও ফাঁসির দাবি জানিয়েছে।