দেরাদুন, ৩০ এপ্রিল: উত্তরাখণ্ড সরকারের লাইসেন্সিং অথিরিটি পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে কেন সেই জবাব দিতে হবে উত্তরাখণ্ড সরকারকে। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে পতঞ্জলির বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন মামলায় একরকম তুলোধনা করা হল উত্তরাখণ্ড সরকারকে। বিচারপতি হিমা কোহলি এবং আহসানুদ্দিন আমানাতুল্লাহর বেঞ্চ স্পষ্ট করে জানাল আদালতের নির্দেশের পরই নড়ে চড়ে বসে এই সরকার। তার আগে বছরের পর বছর নিষ্ক্রিয় ছিল তারা রামদেবের পতঞ্জলির বিরদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।
আদালত জানায় মাত্র ৭-৮ দিন আপনারা সক্রিয় হয়েছেন নিজেদের কর্তব্য নিয়ে। এসব কাজ আপনাদের অনেক আগেই করা দরকার ছিল। আপনাদের এই ব্যর্থতা কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন, জানতে চায় আদালত। সুপিরিয়র অথরিটির নির্দেশ কেন অমান্য করা হয়েছে? বিগত ছয় বছর কেন নিশ্চুপ ছিলেন, প্রশ্ন করে কোর্ট।
কোর্টের নির্দেশের পরই লাইসেন্সিং অথরিটি সক্রিয়তা দেখাচ্ছে। উত্তরাখণ্ড সরকারও ক্ষমা প্রার্থনা করে কোর্টে এফিডেবিট জমা দেয় পতঞ্জলির মতো। রামদেবদের পতঞ্জলির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হয়নি বলে ভুল স্বীকার করে। বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন নিয়ে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে জানায় তারা।
উত্তরাখণ্ডের আইনজীবী মঙ্গলবার আদালতে তীব্র চাপের মধ্যে পড়েন। তিনি বলেন এই নিয়ে এ পর্যন্ত কি কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তারা জানায়, কেন্দ্রীয় সরকারকে এবং আয়ুষ মন্ত্রককেও তারা চিঠি লিখে পতঞ্জলির কয়েকটি পণ্য নিষিদ্ধর দাবিও জানিয়েছিল।
বিচারপতি কটাক্ষ করে বলেন, একদিনে হঠাৎ দায়িত্ববান হয়ে উঠেছেন অফিসার। আদালতে উত্তরাখণ্ড সরকার জানায় তারা পতঞ্জলির ১৪টি ওষুধের লাইসেন্স বাতিল ঘোষণা করেছে। কোনও সাইট ইন্সপেকশান করেছেন কিনা অফিসাররা জানতে চায় আদালত। সেই রিপোর্ট পেশ করার কথা বলা হয়। উল্লেখ্য, উত্তরাখণ্ডকে কেন্দ্র করেই পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের সাম্রাজ্য বিস্তার লাভ করে। এখন সেই সাম্রাজ্য নিয়ে টানাটানি চলছে। যোগগুরু রামদেবকে এবং কোম্পানির এমডিকে সিংহাসন ছেড়ে সুপ্রিম কোর্টে হাজিরা দেওয়ার জন্য ছুটতে হচ্ছে। পাঁচবার সশরীরে হাজিরা দিতে হয়েছে রামদেবকে। যদিও মঙ্গলবার হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ তুলে নেওয়া হয়। তবে কেন্দ্রীয় সরকার এখনও জানায়নি তারা ব্যবস্থা নিতে এত বছর বিলম্ব করেছে কেন। পরবর্তী শুনানির দিন রয়েছে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। নির্বাচনের সময় পতঞ্জলি নিয়ে গেরুয়া শিবির অনেকটা বেকায়দায় বলে মনে করছেন বিরোধীরা। তারা বলছেন, সুপ্রিম কোর্টের তীব্র ভর্ৎসনার পর রামদেবের পাশে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে না কোনও গেরুয়া নেতাকেও।
২০২০: সাত দিনেই করোনা শেষ হবে, দাবী পতঞ্জলির। বাজারে নিয়ে আসে করোনিল ওষুধ। উত্তরাখণ্ড সরকারের কাছে আবেদন জানায় করোনিল লাইসেন্সকে ইমুউনিটি বুস্টারের বদলে কোভিড-১৯-এর প্রতিষেধক ওষুধ বলা হোক।
২০২১: দাবি করে করোনা ভাইরাসের সাপোর্টিং ওষুধ হিসেবে মান্যতা পাওয়া গিয়েছে। সেই সময় উত্তরাখণ্ড সরকার ও আয়ুষ মন্ত্রক জানায় করোনিল কোভিড-১৯ এর প্রতিষেধক নয়। নতুন করে করোনিল নিয়ে প্রচার হয়, করোনার ওষুধ হিসেবে তুলে ধরা হয়। তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধনকে আনা হয় সেই আনুষ্ঠানে
২০২২: সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। ফার্মা ও মেডিক্যাল উদ্যোগ (এলোপ্যাথি ও মর্ডান চিকিৎসা বিজ্ঞান) বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। সেটা থেকে নিজেকে ও দেশকে বাঁচাতে হবে। ইন্ডিয়ান মেডিকেল এসোসিয়েশন সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায়, বলা হয় পতঞ্জলি কোভিড ভ্যাকসিন ও এলোপ্যাথি নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচার শুরু করেছে।
২০২৩: সুপ্রিম কোর্ট পতঞ্জলির বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন বন্ধ করার নির্দেশ দেয়।
২০২৪: আইএমএ আবার কোর্টে আসে। পতঞ্জলির বিঞ্জাপন ফের ছাপাচ্ছে দেখানো হয়। পতঞ্জলি কোর্টের রায় মানছে না বলা হয়। সুপ্রিম কোর্ট আদালত অবমাননার নোটিশ জারি করে। নোটিশের জবাবও দিতে চায় না পতঞ্জলি। রামদেবকে কোর্টে হাজিরা দিতে বলা হয়। রামদেব ও এমডি বালাকৃষ্ণান কোর্টে হাজির হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। প্রথম মাফিনামা খারিজ হয়। পুনরায় ক্ষমা প্রার্থনা করে। কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েও ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়। প্রথমে ছোট সাইজে পরে বড় সাইজে। পুনরায় মাফিনামা পেশ হয়। বলা হয় ‘এ্যায়সা গলতি আউর নেহি হোগি।’