মোল্লা জসিমউদ্দিন: মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের এজলাসে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের রিপোর্ট জমা পড়লো। এদিন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট পেশ করেছে সিবিআই। ধৃত কুন্তল ঘোষ এবং তাপস মণ্ডল সম্পর্কে বেশকিছু বিস্ফোরক দাবি করা হয়েছে এই দাখিল রিপোর্টে।
সিবিআইয়ের দাবি, -‘ টেট পরীক্ষা দেওয়ার পর প্রার্থীদের মধ্যে অনেকে যোগাযোগ করতেন এই দুজনের সঙ্গে’। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্ট সেই রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে চার্জশিটের কপিও।নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে ঠিক কী কী উঠেছে? তা বিস্তারিত তথ্য রিপোর্টে কলকাতা হাইকোর্টকে সিবিআই জানিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।শুধু তাই নয়, অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষ, তাপস মণ্ডল সহ আরও কয়েকজন ব্যক্তির নাম রয়েছে। তাঁদের মধ্যে কীভাবে অশুভ আঁতাত গড়ে উঠেছে সেই তথ্যও উল্লেখ রয়েছে বলে জানা গেছে।
কলকাতা হাইকোর্টে জমা দেওয়া সিবিআই রিপোর্ট অনুযায়ী, অবৈধ ভাবে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল। এজন্য একটা চক্র তৈরি হয়েছে। যেখানে নিয়োগ দুর্নীতির অন্যতম অভিযুক্ত তাপস মণ্ডল এবং তাঁর সাব – এজেন্টদের মাধ্যমে মূলত টিচার্স ট্রেনিং কলেজের মালিকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য টাকা সংগ্রহ করা হত বলে দাবি।
এই বিষয়ে সিবিআইয়ের আরও দাবি, -‘ ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তাপস মণ্ডল তার ৮ জন এর এজেন্টদের মাধ্যমে ১৪১ জনের কাছ থেকে ৪ কোটি ১২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করেছিল।সে অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষকে ৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা দিয়েছে বলেও দাবি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। প্রায় একই কায়দায় এবং একই সময়কালে কুন্তল ঘোষ তার তিনজন এজেন্টদের মাধ্যমে ৭১ জন চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে ৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা তুলেছিল।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের মতে, এই অভিযুক্তরা মিলে একটি ভুয়ো ওয়েবসাইট তৈরি করেছিল। আর সেই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টেটে অকৃতকার্য প্রার্থীদের কৃতকার্য বলে দেখানো হত বলে সিবিআইয়ের তদন্তে উঠে এসেছে বলে দাবি।ভুয়ো ওয়েবসাইটটি একেবারে অবিকল আসল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দেখতে ছিল।
এর ফলে আসন-নকলের মধ্যে পার্থক্য গুলিতে ফেলতেন চাকরি প্রার্থীরা । জালিয়াতি এখানেই শেষ নয় বলছে সিবিআই! সিবিআইয়ের কথায়, অযোগ্য চাকরি প্রাপকদের ভুয়ো ইমেল আইডি থেকে মেল পাঠানো হতো।
যেখানে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডেকে পাঠানো হত। যথাযথ নিয়ম না মেনে ওএমআর মূল্যায়নের জন্য এস. বাসু রায় এন্ড কোম্পানিকে হস্তান্তর করা হয়েছিল বলেও হাইকোর্টে জমা দেওয়া রিপোর্টে উল্লেখ সিবিআইয়ের।তদন্তকারীরা তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ৭৫২ জনের চাকরি প্রার্থীদের একটি তালিকা প্রকাশিত হয়।
এই ৭৫২ জনের মধ্যে ৩১০ জনকে চাকরি দেয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সহ এসএসসি এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অনেক কর্মকর্তা বর্তমানে জেল হেফাজতে রয়েছেন। এর পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে দ্রুত শুনানিও চলে।