এস জে আব্বাস, পূর্ব-বর্ধমান: রাজনীতির আঙিনায় দিলীপ ঘোষ চর্চিত এক নাম। একসময় তিনি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সর্বেই-সর্বা। বর্তমানে দলে তাঁর ভূমিকা কিছুটা হলেও কোণঠাসা। নিজের গড় মেদিনীপুর ছেড়ে তাঁকে দাঁড়াতে হয়েছে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন দিলীপ ঘোষ। তৃণমূলের পক্ষ থেকে কমিশনে নালিশ জানানো হয়েছিল। পরে চাপের মুখে ক্ষমাও চান তিনি। সেই দিলীপ ঘোষ হঠাৎই পাল্টে গেলেন!
বৃহস্পতিবার ইদের দিন প্রচারে যাচ্ছিলেন ওরগ্রাম হয়ে ভাতার। বাঘার দু’নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তালিতের কাছে পথিমধ্যে চলছিল ঈদ উপলক্ষে তৃণমূলের জলসত্র ক্যাম্প। শরবত পান করানো হচ্ছিল পথচারীদের। ঠিক সেই সময় রাস্তা দিয়ে বিজেপি প্রার্থীর গাড়ি যাচ্ছিল। সেখানে দিলীপ ঘোষ গাড়ি থেকে নামেন। শরবত পান করতে করতে সটান গিয়ে হাজির হন তৃণমূলের মঞ্চে। তৃণমুল কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উন্মাদনাও তৈরি হয়। জোরে জোরে স্লোগান ওঠে, “জয় বাংলা”। পাশাপাশি তৃণমুল কংগ্রেস ও মমতা ব্যানার্জির নামেও জয়ধ্বনি দেওয়া হয়। এ সময়ে তৃণমূলের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন, বর্ধমান-১ ব্লকের সভানেত্রী কাকলি তা গুপ্ত, যুব সভাপতি মানস ভট্টাচার্য সহ তৃণমূলের অন্যন্য নেতৃত্ব ও কর্মীরা। যদিও ওই মঞ্চ থেকে দিলীপ ঘোষ কোন বিতর্কিত মন্তব্য করেননি। তিনি হাসি মুখে সকলকে ইদের শুভেচ্ছা জানান। কোলাকুলিও করেন।
কিন্তু হঠাৎ তৃণমূলের মঞ্চে দিলীপ ঘোষ কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে দিলীপ বলেন, “আমাকে ডাকেন তাঁরা।শরবত খেতে দেন। বলেন বসুন। ওদের ক্যাম্পে গিয়ে বসি। শুভেচ্ছা বিনিময় করি। কোলাকুলি করি। ওদের মাইকে ভাষণ দিয়ে বলি, সম্প্রীতির ভালোবাসার ইদ, গাজন, নীল এবং বাংলা নববর্ষ, রামনবমী আসছে সমস্ত অনুষ্ঠান যেন সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে পালন হয়। বিভিন্ন ইস্যুতে যে যার নিজের মতো করে ভোটের ময়দানে লড়াই করবে। উৎসবের আনন্দ সকলকে মিলেমিশে ভাগ করে নিতে হবে। উৎসবের সঙ্গে রাজনীতি কে মেশালে হবে না।”
বর্ধমান ১ ব্লক তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি মানস ভট্টাচার্য জানান, “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। যখন জলসত্র অনুষ্ঠান চলছিল, পথ চলতি মানুষকে শরবত খাওয়াচ্ছিলাম। দিলীপ ঘোষ ওখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমরা সৌজন্যের বিনিময়ে উনাকেও শরবত দিই। উনি গাড়ি থেকে নেমে আসেন। মঞ্চে যান এবং সবাইকে ধন্যবাদ জানান। আমরা সৌজন্যতে বিশ্বাসী।”
অন্যদিকে, নানা জল্পনার মাঝেই রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “এর সঙ্গে কোনও রাজনীতির সম্পর্ক নেই। বিজেপি প্রার্থী কেন, যেকোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী আসতে পারেন এই অনুষ্ঠানে। তাঁর বক্তব্যও রাখতে পারেন। আজকে যারা মিথ্যে কথা বলে কেন্দ্রের কাছে পশ্চিমবাংলার আইন শৃঙ্খলা নিয়ে এবং পশ্চিমবাংলার আইনব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলে তাদের কাছে এটা একটা জ্বলন্ত উদাহরণ।”
তবে, প্রাক্তন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সদস্য নুরুল হাসান, এই ঘটনা প্রসঙ্গে রীতিমত কটাক্ষ করে জানিয়েছেন, ‘ আমরা এখন নকল তৃণমূল। আসল তৃণমূলের থিলার আমরা দেখলাম। বর্ধমান ১ ব্লকের নেতৃত্ব কিভাবে বিজেপির কাছে পিছিয়ে গেছে, কিভাবে তারা বিজেপির সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রেখে চলছেন। আজকে আমাদের যারা দলের ব্লকের নেতৃত্ব তারা যেভাবে দিলীপ বাবুকে সরবত দিয়ে, কানে কানে কথা বলে, ক্যাম্পে ডেকে নিয়ে প্রচারের ব্যবস্থা করে দিলো সেটা থেকেই বোঝা যাচ্ছে আমাদের যিনি প্রার্থী কীর্তি আজাদকে জেতানোর জন্য এরা কতটা সচেষ্ট, আর দিলীপ বাবুকে জেতানোর জন্য এরা কতটা সক্রিয়। এরা আসলে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন, তৃণমূলের ক্ষতি করছেন। দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে বারবার এই বিষয়ে জানানো হয়েছে। এখন তো আজকের ঘটনা সবই দেখতে পাচ্ছেন। ধিক্কার জানাচ্ছি দলের নেতৃত্বের এই দলবিরোধী কার্যকলাপের। আশঙ্কা হচ্ছে এদের হাত ধরে আমাদের প্রার্থীর জয় কতটা নিশ্চিত!”
যদিও বিজেপি কর্মীদের মধ্যেও দিলীপ ঘোষের এমন আচরণ নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়। তাঁদের মধ্যেও অনেকের ধারণা এতে হয়ত তৃণমূলের সুবিধা হল। তবে, সাধারণ মানুষ বলছেন, দল এবং কমিশনের কাছে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে শোকজ খাওয়ার পরে দিলীপ ঘোষের এবার বোধদয় হয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলায় ভোটের আবহে সম্প্রীতি ও সৌভ্রাতৃত্ব বজায় থাক।