মোল্লা জসিমউদ্দিন: শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের এজলাসে উঠে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে পুলিশি নিস্ক্রিয়তা বিষয়ক মামলা।মথুরাপুরের তৃণমূল প্রার্থী বাপি হালদার এবং তাঁর স্ত্রী তথা তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান শিলি হালদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েও এফআইআর দায়ের না করায় মথুরাপুর থানার ওসিকে এদিন শো-কজ় করল কলকাতা হাইকোর্ট এর সিঙ্গেল বেঞ্চ।একমাস পরেও অভিযোগ না নেওয়ায় মথুরাপুর থানার ওসি-কে শোকজ করেছেন বিচারপতি সেনগুপ্ত। আগামী ৬ মে এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে। এদিন এই মামলার শুনানি পর্বে বিচারপতি রাজ্যের আইনজীবী কে প্রশ্ন করেন, “ভূপতিনগরের সময়ে অনুসন্ধান না করেই শুধুমাত্র অভিযুক্তের স্ত্রীর বক্তব্যে এফআইআর নিলেন! আর এক্ষেত্রে গুরুতর অভিযোগ থাকার পরেও এফআইআর নয় কেন?”
বিচারপতি জানান, ‘সংশ্লিষ্ট থানার ওসি-কে ১৫ দিনের মধ্যে জানাতে হবে, কেন এক মাসের উপরে এফআইআর না করে অভিযোগ ফেলে রেখেছেন?’ সুন্দরবন পুলিশ জেলার এসপি কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, ‘কোনভাবে অভিযোগকারীদের নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয়, সে বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে হবে’। রাজ্যের আইনজীবী বলেন, “অনুসন্ধান করা হচ্ছে। বিডিও দেখছেন গোটা বিষয়।” কিন্তু রাজ্যের বক্তব্য শোনা মাত্রই বিরক্ত হন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “হঠাৎ অনুসন্ধান কেন? আবার বিডিও এখানে আসছেন কোথা থেকে? কোর্ট কেন অর্ডার দেবে? যেখানে প্রাথমিক ভাবে অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে আবার অনুসন্ধান কেন?”
তখনই বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “আপনারা ভূপতিনগরে ক্ষেত্রে ধৃতের স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান না করেই এফআইআর করে দিলেন। আর এখানে অভিযোগে যা রয়েছে, তাতে অভিযোগ জানানোর এক মাস পরেও এফআইআর করার মতো জায়গায় পৌঁছল না পুলিশ! তথ্য নথি নষ্ট করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য এটা চেষ্টা নয়! আপনার যদি মনে হয় অভিযোগে অপরাধের কোনও ইঙ্গিত নেই, তাহলে আপনি খোলা এজলাসে অভিযোগ পড়ুন।” তারপরই তিনি ওসি-কে শোকজ করেন।
উল্লেখ্য, মথুরাপুরের কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েত বর্তমানে বিজেপির দখলে। আগে এই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন তৃণমূলের বাপি হালদার। পরে এই পঞ্চায়েত মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত করা হয়। তখন প্রধান হন বাপির স্ত্রী শিলি। বিজেপির অভিযোগ, শিলি খাতায় কলমে প্রধান হলেও, সব কিছু দেখভাল করতেন বাপিই। গত ২০২৩ সালে বিজেপি এই পঞ্চায়েতের দখল নেয়। তারপর গত ৭ মার্চ লিখিত অভিযোগ তোলে বিজেপি , ২০১৮-১৯ সালের পর থেকে এই পঞ্চায়েতে ব্যাপল দুর্নীতি হয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনিক বিভিন্ন স্তরে অভিযোগ জানানো হয়। এরপর পুলিশি নিস্ক্রিয়তার ভিত্তিতেই মামলা দায়ের হয়।শুক্রবার এই মামলার শুনানি চলে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের এজলাসে। একমাস অতিক্রম করে কেন এফআইআর দাখিল হয়নি? সেই ব্যাপারে মথুরাপুর থানার ওসি কে শোকজ করা হয়েছে। আগামী ৬ মে এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। তার আগেই শোকজের উত্তর জমা দিতে হবে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চে।