আহমদ হাসান ইমরান: মহাশক্তিধর অপরাজেয় সামরিক শক্তি ইসরাইলের অবরুদ্ধ ছোট্ট ভূ-খণ্ড ‘গাজা বিজয়’-এর গর্বকে চুপসে গেল?! মার্কিন ও ব্রিটেনের দোস্ত অপ্রতিরোদ্ধ ইসরাইলের কৃতিত্ব অবশ্য কম নয়। সোমবার গাজা যুদ্ধে ১৮৫তম দিনে তাদের অর্জন হচ্ছে যে, তারা ৩৩,২০৭জন ফিলিস্তিনিকে ভয়ংকর বোমা ও মিসাইলের দ্বারা খুন করতে সক্ষম হয়েছে।
আর তাদের নৃশংস আক্রমণে আহতদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৫,৯৩৩-এ। বর্ণিত এই পরিসংখ্যানকে ইসরাইল, আমেরিকা, ব্রিটেন কিংবা অক্ষম রাষ্ট্রসংঘ কেউই অস্বীকার করছে না। বরং বাইডেন, নেতানিয়াহু, ঋষি সুনকরা এতে গর্বিত। কারণ, আমেরিকা, ব্রিটেনের অর্থায়ন এবং তাদের রাজনৈতিক ও সামরিক সাহায্য এবং মারাত্মক অস্ত্র সরবরাহের জন্যই কিন্তু ইসরাইল টিকে রয়েছে।
মার্কিন ও ইউরোপের দেশগুলির সহায়তা ব্যতীত অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের দুইদিনও টিকে থাকার ক্ষমতা নেই।
ইসরাইল কাদের হত্যা করেছে? নিহত ও জখমদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই প্রায় অর্ধেক। তারপরই ফিলিস্তিনি নারীদের সংখ্যা। কিন্তু রাষ্ট্রসংঘ, সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদ, আন্তর্জাতিক আদালত কোনও কিছুকেই ইসরাইল আমলে আনছে না। এখনও সমানে তাদের হত্যালীলা জারি রেখেছে। সোমবারও ৩২জন ফিলিস্তিনি লাশে পরিণত হয়েছে এবং কমপক্ষে ৪৮জন আহতকে ‘হাসপাতালে’ পাঠানো হয়েছে, যা আদৌ ‘হাসপাতাল’ নামে পদবাচ্য নয়। বোঝা যাচ্ছে, হত্যাযজ্ঞ থামানোর জন্য মার্কিন দোস্ত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের হুঁশিয়ারিটি নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া মাত্র। বাস্তবে এর কোনও প্রতিফলন নেই।
হত্যা চলছে অবিরামভাবে। যারা মারা যাচ্ছে তারা ফিলিস্তিনের অধিবাসী নিরীহ বেসামরিক মানুষ। আর গাজা ও লেবাননে প্রতিরোধ যোদ্ধা হামাস, হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেন থেকে হুথি আনসারুল্লাহ-রা কিন্তু সমানে লড়ে যাচ্ছে।
তাদের আক্রমণে বিধ্বস্ত গাজাতেও প্রতিদিন নিহত হচ্ছে অসংখ্য দখলদার ইসরাইলি সেনা। তাদের আহতের সংখ্যাও অগণিত। ইসরাইলের হাসপাতালগুলি এখন আহত সেনাদের চিকিৎসার জন্য ২৪ ঘণ্টা কাজ করে চলেছে। এছাড়া ইসরাইলের অপরাজেয় ট্যাঙ্ক, বিমান এবং অন্যান্য সামরিক স্থাপনার উপরও চলছে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের দ্বারা সঠিক নিশানায় সফল হামলা।
ইসরাইল বলেছিল, গাজাকে পদানত করে তারা হামাসকে সম্পূর্ণ নিকেশ করবে। যায়নবাদী ইহুদি সেনা, বিমানবাহিনী অবশ্যই গাজার সমস্ত পরিকাঠামো ধ্বংস করে বর্বরতার চরম নমুনা রেখেছে। অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের কাছে তা মোটেই জেনোসাইড বা হলোকাস্ট নয়।
কিন্তু গাজার শহিদ ও জখমরা একটি কথা প্রমাণ করতে পেরেছে যে, ইসরাইল এক নারকীয় শক্তি যা এখন ক্ষিয়মান হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এটা হয়েছে হামাস, হিজবুল্লাহ, হুথিদের কাছে মার খেয়ে। প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হামলার মুখে পড়ে ইসরাইল দক্ষিণ গাজায় টিকতে পারেনি এবং তারা ঘোষণা করেছে, ইসরাইলি বাহিনী দক্ষিণ গাজা থেকে তার সমস্ত সেনাকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। কিন্তু কেন? হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, ইসরাইলি সেনারা বিশ্রাম নিতে ও নিজেদের ফের তরতাজা করার জন্য দক্ষিণ গাজা ত্যাগ করেছে। চারমাস ধরে তারা দক্ষিণ গাজায় ছিল। এই সেনাদের তো বিশ্রাম চাই!
তবে ফক্স নিউজ বলছে, বিশেষজ্ঞদের ধারণা হল, এই জন্য সৈন্য অপসারণের সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে উত্তরে হিজবুল্লাহর শক্তিশালী হামলার আশঙ্কা এবং ইরান সরাসরি ইসরাইলে আঘাত করবে এই ভয়। তাদের হামাসকে নিকেশ করার কিংবা গাজাকে নিজেদের অধিকারে আনার কোনও স্বপ্নই কিন্তু বাস্তব হল না।
এখন ইসরাইল যুদ্ধবিরতি এবং সেইসঙ্গে হামাসের সঙ্গে বন্দি মুক্তির জন্য কায়রোতে দরাদরি করছে। কিন্তু হামাস প্রমাণ করে দিয়েছে, আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র না থাকলেও কুরবানির মাধ্যমে মুসলিম সেনারা শুধুমাত্র ঈমানকে হাতিয়ার করেও যুদ্ধে অপরাজিত থাকা যায়। এটা আজ সারা বিশ্ব উপলব্ধি করতে পেরেছে।