ইনামুল হক, বসিরহাট: মানুষ সামাজিকভাবেই মিলেমিশে থাকতে চায় এটাই সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে মানুষের প্রধান ধর্ম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ধর্মীয় মূল্যবোধের জায়গাগুলো নড়বড়ে করে দিচ্ছে জাতপাতের ছোঁয়াছুঁয়ি নয়, রাজনীতির ছোঁয়াছুঁয়ি। ধর্মকে নিয়ে যেভাবে রাজনীতি হচ্ছে তা আগামী দিনে সামাজিক মানুষ হিসেবে প্রত্যেকের কাছেই আশংকাজনক। এর থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। কারণ প্রতিটি মানুষই এখনো শান্তির পক্ষে।
ইসলাম ধর্মের শান্তির ঐতিহ্যকে রক্ষার দায়িত্ব কেবল মুসলিমদের নয়, যারা অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ একই সামাজিক গণ্ডির মধ্যে বসবাস করেন তাদেরও দায়িত্ব থেকে যায়। সোমবার উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার দক্ষিণ শিমুলিয়া বাইতুন নূর জামে মসজিদের একটি অনুষ্ঠানে এসে একথা বলেন বিশিষ্ট সমাজসেবী ও ধর্মীয় উদারবাদী ব্যক্তিত্ব পার্থসারথি বোস। তিনি বারাসতের নবপল্লী এলাকার বাসিন্দা।
উল্লেখ্য, এই পার্থসারথি বোস এর পরিবার বংশানুক্রমিকভাবে একটি মসজিদকে রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন। যেটির অবস্থান বারাসাতের নবপল্লী এলাকায়। মসজিদটির নাম আমানতি মসজিদ। পারিবারিক পরম্পরা মেনে এই মসজিদটির দেখাশোনার বর্তমান দায়িত্বে আছেন পার্থসারথি বাবু। তিনি জানালেন, দেশভাগের পরবর্তী সময়ে বিনিময় করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ববঙ্গের খুলনা থেকে এপার বাংলায় চলে আসেন তার দাদুর পিতারা। বিনিময় করেন জনৈক মুসলিম পরিবারের সঙ্গে। যাদের পৈত্রিক ভিটেই ছিল এই মসজিদটি। এলাকার অন্য মুসলিমরাও দেশত্যাগের ফলে এক প্রকার অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে এই মসজিদটি। আমার দাদু ও বাবারা মসজিদটিকে নষ্ট হতে দেননি।
এটি সংস্কার করে সাঁঝবাতি দেওয়া থেকে শুরু করে আযান দেওয়া ও নামায পড়ার জন্য প্রতিবেশী এলাকা থেকে মুসলিম ভাইদের ডেকে আনার ব্যবস্থা করেন। এখন নিয়মিত হয় জুমার নামাজও। রমযান মাসে চলছে উপবাস ভাঙ্গার পর ইফতারি। মসজিদের আয় ব্যয়ের সবটাই দেখতে হয় তাদের জানালেন পার্থসারথি বোস। এই মহল্লায় মুসলিম না থাকলেও নিয়মিত পথ চলতি মুসলিমদের পাশাপাশি নিকটবর্তী গ্রাম থেকেও চলে আসেন অনেকে। এখন প্রতিদিন প্রায় ১০০ জনের মত রোজাদার ব্যক্তির ইফতারের ব্যবস্থা করতে হয় এখানে।
আজ চারিদিকে ধর্মীয় সংকীর্ণতার রাজনীতি যখন ক্রমশ হিংসা বিদ্বেষে ভরে তুলছে আমাদের মন ঠিক তখনই এই ধরনের একটি মসজিদ নজরে এলে মন ভালো হয়ে যায় হিন্দু- মুসলিম অনেকেরই। আর সেই বার্তা দিতে আজও যথারীতি আমানতি মসজিদের দেখভাল করছেন পার্থ সারথি বোসেরা।
এমন একজন সম্প্রীতির নজির স্থাপনকারী ব্যক্তিত্বকে সম্মাননা জ্ঞাপন করলো উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়া দক্ষিণ শিমুলিয়া বাইতুন নূর জামে মসজিদ কমিটি। সোমবার পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রাক্কালে বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে পার্থসারথি বোসকে মঞ্চে তুলে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন মাগুরখালি জামে মসজিদের পেশ ইমাম আলহাজ ইয়াসীন আলি সাহেব।
অন্যদের মধ্যে ছিলেন মসজিদের সম্পাদক মুহাম্মদ সফিকুর রহমান,কোষাধ্যক্ষ আলহাজ্ব সামসুর রহমান, জেলা পরিষদের সদস্য প্রতিনিধি আশিক বিল্লাহ, সমাজসেবী সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য বনি, সুভাষ সাহা, পার্থ চক্রবর্তী, কবি আমির আলী, বাদুড়িয়া থানার এস আই দেবরাজ সাঁপুই,ফয়েজ আলি, কবি আমির আলি প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শিক্ষক সুলতানুল আরেফিন। উল্লেখ্য এদিন হিন্দু-মুসলিম পুরুষ মহিলা ও শিশু মিলিয়ে প্রায় এক হাজার মানুষকে বস্ত্র উপহার দেওয়া হয়।