বিশ্বজিৎ ঘোষ : একদিকে প্লাস্টিক দূষণের গ্রাস থেকে পৃথিবীকে রক্ষার লক্ষ্য। অন্যদিকে, শিশুদের শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি বড়দেরকেও সুস্থ রাখার লক্ষ্য। আর এই সব লক্ষ্য পূরণে হাতিয়ার এবার কলমের কালি। সঙ্গে অবশ্য ফাউন্টেন পেন বা ঝরনা কলমও থাকছে।
এমনই বলা হচ্ছে ঝরনা কলমের নামকরা কালি প্রস্তুতকারী একটি সংস্থা সুলেখা ওয়ার্কস লিমিটেডের তরফে। আর ওই সব লক্ষ্য পুরণের অঙ্গ হিসাবে আগামী ৫ এবং ৬ এপ্রিল, বেলা ১২ টা থেকে সন্ধে সাতটা পর্যন্ত দক্ষিণ কলকাতার গোলপার্কে অবস্থিত রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচার-এ প্রদর্শনীর পাশাপাশি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। সুলেখা ওয়ার্কস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর কৌশিক মৈত্র জানিয়েছেন, হাতেকলমে শেখানোর এই কর্মশালায় ছোট থেকে বড়, যে কোনও বয়সিদের জন্য থাকছে অবাধ প্রবেশের ব্যবস্থা। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের প্রোগ্রাম ভারতে কেন, বিশ্বের কোথাও হয়নি।’
প্লাস্টিক দূষণের জেরে কীভাবে যে ভয়ঙ্কর বিপদের সম্মুখীন হতে পারে মানবসভ্যতা, কীভাবে যে বড়মাপের সংকটে পড়তে পারে এই পৃথিবী, সেই সব বিষয়ে ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছেন বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ। কৌশিক মৈত্র জানান, প্লাস্টিক দূষণ সাংঘাতিক রকমের বেড়ে চলেছে। প্লাস্টিকের তৈরি ইউজ অ্যান্ড থ্রো ডট পেন-ও বাড়িয়ে তুলছে এই দূষণ। অথচ, লেখার জন্য কালির পেন টেকসই উপকরণ। আর, এই কালির পেন নষ্ট হয়ে গেলে, ডট পেনের মতো ফেলে না দিয়ে সারিয়ে নেওয়া যায়। তবে প্লাস্টিক দূষণ রোধের লক্ষ্যে শুধুমাত্র ফাউন্টেন পেন ব্যবহারের বিষয়টিও নয়।
কৌশিক মৈত্র বলেন, ‘কালি দিয়ে লেখা হচ্ছে, এটা বড় বিষয়। কিন্তু এই কালি দিয়ে খুব ভালো ছবিও আঁকা যায়।’ তিনি জানান, তাঁদের সংস্থার তৈরি কালি দিয়ে কয়েকজন শিল্পী ছবিও আঁকছেন। ঠিক হয়, এই জগতে ছোটদেরও নিয়ে আসা যেতে পারে। কারণ, মোবাইল ফোনের নির্ভরতা এতটাই বেড়ে গিয়েছে, এর প্রতি ছোটরাও এতটাই আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে যে তাদের জগৎ হয়ে উঠেছে মোবাইল ফোনের স্ক্রিন। এর পর ওই প্রদর্শনী এবং কর্মশালা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফাউন্টেন পেনের কালি দিয়ে ছবি আঁকার পাশাপাশি কীভাবে ভালো হতে পারে হাতের লেখা, হাতেকলমে সে সবও শেখানো হবে এই কর্মশালায়।
আর, এই কর্মশালার মাধ্যমেও ফাউন্টেন পেন এবং এই কলমের কালিকে হাতিয়ার করে লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে চাইছেন তাঁরা। কৌশিক মৈত্র বলেন, ‘চেপে লিখতে হয় ডট পেন দিয়ে। এর ফলে ফিঙ্গার আর্থ্রাইটিসের সমস্যা তৈরি হতে পারে। অনেক চিকিৎসক বলছেন, শিশুদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। এই সমস্যার পাশাপাশি রাইটার্স ক্র্যাম্প থেকেও বেরিয়ে আসার উপায় হতে পারে ফাউন্টেন পেনের ব্যবহার।’ তিনি বলেন, ‘পারকিনসনের সমস্যা অনেক কমিয়ে রাখতে পারে। হাত, চোখ এবং ব্রেন কোঅর্ডিনেশন অনেক ভালো থাকে। এমন বিভিন্ন উপকার রয়েছে ফাউন্টেন পেনের।’
সুলেখা ওয়ার্কস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বলেন, ‘অন্য বিভিন্ন রাজ্যের বহু স্কুলে এখন কমপালসারি করে দিচ্ছে ফাউন্টেন পেনের ব্যবহার। পড়ুয়াদের হাতের লেখা ভালো করার জন্য বেঙ্গালুরুর একজন শিক্ষিকা ২০০টি ফাউন্টেন পেন আর কালি নিয়েছেন। শিক্ষকরা বলছেন, হাতের লেখা ভালো না হওয়ার জন্য পরীক্ষায় কম নম্বর পায় অনেকে। এই কারণে অনেকে ডিপ্রেশনেও চলে যাচ্ছে। এ সব খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সামাজিক তাগিদ থেকেও ফাউন্টেন পেন আর কালির ব্যবহার ফিরিয়ে আনাটা এখন আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে গিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যে শিশু এখনও লিখতে শুরু করেনি, আমরা চাই সেও আসুক এই কর্মশালায়, এখানে তার হাতেখড়ি হোক, তার ইচ্ছা মতো আঁকিবুঁকি করুক এখানে।’