আহমদ হাসান ইমরান: ১ এপ্রিল, ২০২৪ ইসরাইল হঠাৎই এক দুঃসাহসী হামলা চালায় সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের দূতাবাসে। এই হামলায় ইরানের একজন প্রথম সারির সেনানায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ রেজা জাহেদি এবং জেনারেল মুহাম্মদ হাদি হাজি রাহিমী-সহ ৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন।
এই ঘটনার পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ আলি খামেনেই বলেছেন, ইসরাইলকে অবশ্যই শাস্তি দেওয়া হবে। ইসরাইল বিমান হামলা চালিয়ে যেভাবে ইরানের উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করেছে, তার জন্য ইসরাইল আপশোস করতে বাধ্য হবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিও বলেছেন, ইরান অবশ্যই এই কাপুরুষোচিত হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ গ্রহণ করবে।
না, ইরান এখনও কোনও হামলা চালায়নি। কবে ইরান প্রতিশোধ নেবে, তাও কিন্তু স্পষ্ট নয়। কিন্তু হলে কী হবে? ইরান ইসরাইলে হামলা করবে, এই আতঙ্ক ইসরাইলের সরকার, সাধারণ মানুষ, মিলিটারি কর্মকর্তা সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। আতঙ্কের চোটে ইসরাইলি জনসাধারণ তাদের প্রত্যেকের ঘরের বেসমেন্টে যে যুদ্ধকালীন সেল্টার রয়েছে, তাতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশিরভাগ সময় ঢুকে থাকছে।
ইরানের প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণায় ভীত ইসরাইল প্রথমে যে পদক্ষেপটি নিয়েছে, তা হল বিভিন্ন দেশে তাদের দূতাবাসগুলি খালি করে ফেলেছে। সেখানকার কর্মচারী ও তাদের পরিবারসমূহকে তারা অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। যে ইসরাইলি দূতাবাসগুলি ইরানি আক্রমণের ভয়ে খালি করে দেওয়া হয়েছে সেগুলি হল মিশর, মরক্কো, জর্ডন, বাহরাইন এবং তুরস্কে। আর ইসরাইল বিশ্বব্যাপী তাদের দূতাবাসগুলিকে চরম সর্তক অবস্থায় থাকায় জন্য হুঁশিয়ারি প্রদান করেছে। দূতাবাসগুলির নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে।
অন্যদিকে সাধারণ মানুষ এতটাই ভয় পেয়েছে যে, তারা দোকান, মল ও ডিপার্টমেন্টাল স্টলগুলিতে তাদের জরুরি জিনিসপত্র কেনার জন্য লম্বা লাইন দেখা যাচ্ছে। যে জিনিসগুলি তড়িঘড়ি ভীত ইহুদি নাগরিকরা সংগ্রহ করছে তার মধ্যে রয়েছে ট্রানজিস্টার, জেনারেটর, খাদ্যদ্রব্য, ওষুধপত্র ইত্যাদি। ইহুদি নাগরিকদের ধারণা, ইরান আক্রমণ করলে তা কতটা গুরুতর হবে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। আর ইরান আক্রমণ করলে যে দুই দেশের মধ্যে লড়াই শুরু হয়ে যাবে, তাও তারা জানে। একদিকে ইরান সমর্থিক হিজবুল্লাহ এবং হুথি আনসারুল্লাহ-র হামলাতেই ইসরাইল বিপর্যস্ত হয়ে রয়েছে। তার উপর যদি ইরান সরাসরি হামলা চালায়, সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি গুরুতর হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইসরাইল ও পশ্চিমা দেশগুলির ধারণা, ইরানের হাতেও পারমাণবিক বোমা রয়েছে। আর রয়েছে ব্যালেস্টিক মিসাইল, যা ইসরাইলের অভ্যন্তরে যেকোনও টার্গেটে হামলা চালাবার ক্ষমতা রাখে। অবশ্য পারমাণবিক বোমা ইসরাইলের হাতেও রয়েছে। কিন্তু ইরানের হাতে পারমাণবিক বোমা থাকলে তা অবশ্যই ইসরাইলকে নিবৃত্ত করবে, কোনও রকমের হঠকারিতা থেকে।
এ দিকে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ডেনিয়েল হাগারি বলেছেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পালটা আক্রমণের আশঙ্কায় আমরা আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়েছি এবং আমাদের বিমানবাহিনীকে সদা প্রস্তুত রেখেছি। যাতে তারাও পালটা আক্রমণ শানাতে পারে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী তাদের সেনা ও বিমানবাহিনীর সমস্ত ছুটি বাতিল করে দিয়েছে। ইসরাইল জিপিএস সিগনালও ব্লক করে রেখেছে। যাতে ইরানের দূরনিয়ন্ত্রিত অস্ত্রগুলি যেমন মিসাইল এবং ড্রোনকে ভুল পথে পরিচালিত করা যায়। জিপিএস বন্ধ করে দেওয়াতে ইসরাইলি মোটর চালকদের বলা হচ্ছে, তুমি এখন প্যারিসে আছ কিংবা বেইরুটে আছ।
ইসরাইলের অভ্যন্তরে ৭ অক্টোবর, ২০২৩-এর পর আর হামলা হয়নি। কিন্তু সিরিয়ার দূতাবাস হামলার প্রতিশোধ নিতে ইরান যদি ইসরাইলকে আক্রমণ করে, তাহলে তা পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধে এক নয়া মাত্রা যোগ করবে।