‘ইয়েস! উই ক্যান এন্ড টিবি’। এমনই থিম রাখা হয়েছে ২০২৪-এর ওয়ার্ল্ড টিবি ডে উপলক্ষে। টিবি অর্থাৎ, টিউবারকুলোসিস বা, যক্ষ্মা এখনও পৃথিবীর অন্যতম একটি প্রাণঘাতী অসুখ। এবং, কয়েক বছর ধরে টিবি-কে কেন্দ্র করে আতঙ্ক, উদ্বেগ আরও বেড়ে চলেছে বিশেষ করে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি-র কারণে। এ দিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ২০২৫-এর মধ্যে ভারতে টিবি নির্মূল করার লক্ষ্য রয়েছে। এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে ২৪ মার্চ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পালিত হচ্ছে ওয়ার্ল্ড টিবি ডে। টিবি নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে অঙ্গীকার, অনুপ্রেরণা এবং কাজের পুনর্মূল্যায়নের জন্য এই দিনটি একটি সুযোগ বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। ওয়ার্ল্ড টিবি ডে বা বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস উপলক্ষে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক সজল বিশ্বাসের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পুবের কলম-এর প্রতিবেদক বিশ্বজিৎ ঘোষ।
প্রশ্ন: টিবি সেরে যায়। অথচ, এই অসুখের আতঙ্ক কেন ক্রমে বেড়ে চলেছে?
উত্তর: টিবি-র জন্য যখন কোনও ওষুধের আবিষ্কার হয়নি, সেই সময় টিবি মানে কার্যত ছিল মৃত্যুর পরোয়ানা। ‘যার হয় যক্ষ্মা, তার নাই রক্ষা।’ এই প্রবাদবাক্যটি তখন আতঙ্ক সৃষ্টি করত। কিন্তু এখনও আমরা টিবি নিয়ে আতঙ্ক মুক্ত হতে পেরেছি কি না, এটা বড় একটি প্রশ্ন। কারণ, ভারতে ২০২০-তে টিবি রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমলেও, যথাযথ নজরদারির অভাবে ২০২১-এ এই সংখ্যা বেড়েছে ১৯ শতাংশ। বর্তমানে প্রতি বছর ২৬ লক্ষেরও বেশি মানুষের টিবি নির্ণয় হয়। এ দিকে, এই রোগ নির্ণয়ের বাইরে থেকে যান, এমন মানুষের সংখ্যা আরও বেশি। এ দেশে বছরে চার লক্ষেরও বেশি রেজিস্ট্যান্ট টিবি রোগীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে। এখনও এ দেশে প্রতি তিন মিনিটে একজন করে টিবি রোগীর মৃত্যু হয়। টিবির ওষুধের অনিয়মিত সরবরাহের বিষয়টিও রয়েছে। এমন সব উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে চলছে।
প্রশ্ন: মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি-র বিষয়টিও রয়েছে। এ দিকে, ২০২৫-এর মধ্যে এ দেশে টিবি নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে…
উত্তর: সমস্যা হল, ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি রোগীর থেকে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি-র সংক্রমণই ছড়িয়ে পড়ছে। এ দিকে, টিবি-র ওষুধ বিভিন্ন সময় অনিয়মিত হয়ে পড়ায় যেমন টিবি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তেমনই অন্য দিকে ড্রাগ-রেজিস্ট্যান্ট টিবি রোগীদের জন্যেও বিভিন্ন সময় অমিল হয়ে পরে ওষুধ। ফলে টিবি রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি, এই রোগে মৃত্যুর হারও বাড়ছে। এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে এ দেশে ২০২৫-এর মধ্যে টিবি নির্মূল করার লক্ষ্য, কেন্দ্রীয় সরকারের এমন ঘোষণা এখন প্রশ্নের মুখে।
প্রশ্ন: তা হলে, টিবি নির্মূলের জন্য সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রশাসনের তরফে কী করণীয়?
উত্তর: টিবি একটি সংক্রামক রোগ। রোগীর হাঁচি, কাশি, কফ, থুথু, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে, এই রোগ থেকে দূরে থাকতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি। যেমন, ভিড় এলাকায় যেতে হলে মাস্ক পরে নিতে হবে। স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করতে হবে। থাকতে হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। এর পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবারের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। দুই সপ্তাহের বেশি কাশি যদি হতে থাকে কারও, তা হলে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনামূল্যে কফ পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। কারণ, শুরুতেই রোগনির্ণয় সম্ভব হলে, দ্রুত চিকিৎসাও শুরু করা যাবে। এর ফলে রোগ ছড়িয়ে পড়ার মাত্রাও কম করা সম্ভব হবে। রোগ ধরা পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেয়ে যেতে হবে। সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে দেওয়া হয় এই ওষুধ। সচেতন হওয়ার পাশাপাশি টিবি প্রতিরোধের জন্য সাধারণ মানুষকে উদ্যোগী হতে হবে।
টিবি-র চিকিৎসা চলাকালীন প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে রোগীদের দেয় সরকার। টিবি রোগীদের জন্য দত্তক-এর ব্যবস্থাও চালু হয়েছে। চিকিৎসা চলাকালীন পথ্য হিসাবে কোনও টিবি রোগীকে পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার জন্য তাঁকে কেউ দত্তক নিতে পারেন। বলা হয়, গরিব মানুষের অসুখ টিবি। যদিও, অপুষ্টি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসের কারণে এই রোগ হতে পারে। তবে, দেখা যায় বেশিরভাগ টিবি আক্রান্তই সমাজের দরিদ্র অংশের। গরিব মানুষ এবং তাঁদের অর্থনৈতিক অবস্থার পাশাপাশি রয়েছে অপুষ্টি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অনেক মানুষের বসবাসের বিষয়টি। এ সব বিষয়ে সরকারের দায়িত্ব থেকে যায়। টিবি রোগ প্রতিরোধের লক্ষ্যে সমাজের বিভিন্ন অংশে আরও সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মানুষের জন্য পুষ্টিকর খাবার, স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসের জন্য ব্যবস্থা না হলে এ দেশে টিবি নির্মূল কীভাবে সম্ভব হতে পারে? মাঝে মধ্যে টিবির ওষুধের সরবরাহ থাকে না। সরকারি তরফে এই সমস্যাও দূর করতে হবে।