পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে নাগরিকত্ব সংশোধিত আইন বা সিএএ আইন কার্যকর করা নিয়ে চরমে রাজ্য-রাজনীতি। বিরোধী পক্ষের অভিযোগ ভোটের ফায়দা তুলতে কেন্দ্রের ‘সিএএ হুমকি’ মানুষের জীবনে ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এই অবস্থায় অবৈধভাবে আসা রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীরা ভারতে বসবাস ও বসতি স্থাপণের মৌলিক অধিকার দাবি করতে পারে না বলে সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়ে দিল মোদি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র সরকার। আইন ও নীতিগত বিষয়ে বিচার বিভাগীয় হস্তক্ষেপের সীমাবদ্ধতার উপর জোর দিয়ে সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা হলফনামায় সরকারের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে।
বিদেশি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে আটক করা হয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের। তাদের মুক্তির দাবিতে মামলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। আদালতের নির্দেশে এই বিষয়ে হলফনামা দিয়েছে কেন্দ্র। সেখানেই দেশের নাগরিকদের অগ্রাধিকারের কথা বলা হয়েছে।
হলফনামায় কেন্দ্রীয় সরকার এও দাবি করেছে, শরণার্থী হিসেবে ভারতে আসা রোহিঙ্গাদের বিদেশি রূপেও গ্রহণ করা যায় না। হলফনামায় কেন্দ্রীয় সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ভারতের জনসংখ্যা বিপুল। সংস্থান সীমিত। ভারত একটি উন্নয়নশীল দেশ। তাই কেন্দ্র সরকার সব সময় দেশের নাগরিকদের কল্যাণে অগ্রাধিকার দিতে চায়। হলফনামায় কেন্দ্রের দাবি, একজন বিদেশি শুধুমাত্র ২১ অনুচ্ছেদের অধীনে জীবন ও স্বাধীনতার অধিকার ভোগ করে। তারা ভারতে বসতি স্থাপণ করতে পারে না। এই অধিকার শুধু ভারতীয় নাগরিকদের জন্য’। হলফনামায় আদালতকে কেন্দ্র সরকার জানিয়েছে, অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসন দেশের জন্য বিপদ ডেনে আনে। নানা সময়ে দেখা গেছে, বেশিরভাগ বিদেশি অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছে। যা দেশের জন্য কখনও মঙ্গলজনক বা সুখকর হয়নি। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ, অসম সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর রোহিঙ্গা এদেশে প্রবেশ করছে, কেন্দ্রের হলফলনামায় উল্লেখ করা হয়েছে একথা। যদি এমনটাই চলতে থাকে তাহলে এদেশের সুরক্ষা প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়াবে বলে দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি এও বলা হয়েছে, ইতিমধ্যেই বহু রোহিঙ্গা এদেশে ঢুকে ভুয়ো পরিচয়পত্রও বানিয়ে ফেলেছেন, গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে মিলেছে এমনই খবর।
এছাড়াও কেন্দ্রের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গা মুসলিমদের শরণার্থী অথবা উদ্বাস্তু হিসেবে স্বীকৃতির জন্য রাষ্ট্রসংঘের যে প্রস্তাব আছে, ভারত সেই নীতি মানে না। এই প্রসঙ্গে এদেশের সর্বোচ্চ আদালতের নানান রায়ের দৃষ্টান্তও তুলে ধরেছে কেন্দ্র।
সিএএ-তে উল্লেখ আছে, ২০১৫ সালের আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানে নির্যাতিত অমুসলিম সম্প্রদায়কেই নাগরিকত্ব দেবে ভারত। দেশে সিএএ কার্যকর হওয়ার পরে নতুন করে শরণার্থীদের নিয়ে নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করেছে। তবে সব মিলিয়ে, রোহিঙ্গা মুসলিমদের এদেশে থাকতে না দেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্র যে একপ্রকার অনড় তা হলফনামা থেকেই স্পষ্ট।
উল্লেখ্য, কেন্দ্র সরকারের কথায় রোহিঙ্গা মুসলিমরা উদ্বাস্তু নয়, তারা অবৈধ অভিবাসী। ২০১৭ সালে সরকার সংসদে জানিয়েছিল, দেশে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম রয়েছে। সেই সময় সরকার বলেছিল, গত দুই বছরে রোহিঙ্গা জনসংখ্যা ৪ গুণ বেড়েছে।