দেবিকা মজুমদার: যদি আপনার বয়স ৮৫ বছর হয়ে থাকে বা তার বেশি তাহলে এবছর আপনাকে আর ভোট দিতে কোথাও যেতে হবে না। খোদ নির্বাচন কমিশন এবার আপনার বাড়ির দোরগোড়ায় গিয়ে কড়া নাড়বে আপনার ভোট নেওয়ার জন্য। ভাবছেন মশকরা করছি একেবারেই না। এতদিন পর্যন্ত কমিশনের নিয়ম ছিল আপনাকে নির্দিষ্ট একটা ফর্ম পূরণ করে আবেদন করতে হবে বা আপনার বাড়ির লোককে সেই ফর্ম পূরণ করে আবেদন করতে হতো কিন্তু এবার প্রথমবার জাতীয় নির্বাচন কমিশন আপনার বাড়ির দরজায় গিয়ে কড়া নাড়বে আর ১২ডি ফর্ম আপনাকে দেবে। ভাবছেন এও সম্ভব? হ্যাঁ এটা সম্ভব। তার কারণ জাতীয় নির্বাচন কমিশন এবার যে নির্দেশ দিয়েছে সেটাতে অন্তত খুশি হবেন এই ৮৫ থেকে ৮৫ পেরিয়ে যাওয়া সমস্ত ভোটাররা।
আপনার এলাকায় যে বুথ লেভেল অফিসার আছেন তিনি আপনার বাড়ি গিয়ে সংশ্লিষ্ট এই ফর্মটি শুধু দেওয়াই নয় একেবারে আপনাকে দিয়ে পূরণ করিয়ে নিয়ে এসে কমিশনে জমা দেবেন। তারপর সেই ফর্মটি রিটার্নিং অফিসার চেক করবেন এবং তার সম্মতি প্রকাশ করবেন। বাস এইটুকুই মাত্র কাজ। তারপর তৈরি হয়ে যাবে ব্যালট পেপার। অর্থাৎ আপনার সংসদীয় এলাকায় যে কটি রাজনৈতিক দল লড়াই করবে সেই সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের ছবি তাঁদের প্রতীক চিহ্ন দিয়ে তৈরি করা হবে ব্যালট পেপার। তারপরে একটা আস্ত বুথ আপনার বাড়িতেই হাজির হবে। ফার্স্ট পোলিং অফিসার থেকে শুরু করে প্রিসাইডিং অফিসার এবং চারজন কেন্দ্রীয় বাহিনী আপনার বাড়িতে আসবে আপনার মূল্যবান ভোটটা নিতে। এরপর পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে আপনি আপনার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন এবং খাম বন্দি করে তা আপনার সামনেই সিল করে দেওয়া হবে। আপনার কাজ শেষ। এরপর ওই সিলবন্দী খাম খোলা হবে একেবারে গণনার দিন।
যদিও ২০২১ সালে করোনা চলাকালীন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যাদের বয়স ন্যূনতম ৮০ তারাই এইভাবে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রয়োগের অধিকারী হবেন। তবে, সেক্ষেত্রে আপনাকেই আবেদন জানাতে হত। এবার কমিশন সেই নিয়মে একটু রদবদল করেছে। এবার আর ৮০ নয়। এবার ৮৫। তাই আপনাকে আর চিন্তা করতে হবে না। লাইনে দাঁড়িয়ে রোদ-ঝড় বৃষ্টির মধ্যে গিয়ে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হবে না। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ফলে এই রাজ্যে উপকৃত হবেন মোট ৪ লক্ষ ৮৬ হাজারের মতো ভোটার। খুব স্বাভাবিকভাবেই কমিশন এখন থেকেই কিভাবে এই কাজকে নিখুঁতভাবে করবে তা নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। এখন দেখার বিষয় আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের কতজন ৮৫ বছর বা তার বেশি বয়স্ক মানুষ এই সুবিধা উপভোগ করবেন। অর্থাৎ কালের বিবর্তনে জাতীয় নির্বাচন কমিশনও আজ দেখতে দেখতে এতটাই এগিয়ে গিয়েছে যেখানে দেশের সাধারণ মানুষ যারা বয়সের ভারে নুব্জ হয়ে পড়ছেন তাদের পাশে আর কেউ না থাকুক আছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন।