পুবের কলম প্রতিবেদক: পশ্চিমবঙ্গের সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা ক্ষেত্রে ফের নয়া সংযোজন। কারণ, রাজ্যের সরকারি টেলিমেডিসিনে এ বার যুক্ত করা হল ভাইরাল হেপাটাইটিস-এর পরিষেবা। টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে ভাইরাল হেপাটাইটিস-এর এই পরিষেবা এ দেশে প্রথম। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বিভিন্ন অংশের তরফে এমনই মনে করা হচ্ছে, টেলিমেডিসিনে ভাইরাল হেপাটাইটিস-কে যুক্ত করার ফলে এক দিকে যেমন রাজ্যের আরও অনেক বেশি রোগীর কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে এই পরিষেবা। তেমনই অন্য দিকে, জাতীয় ভাইরাল হেপাটাইটিস নিয়ন্ত্রণের কর্মসূচিতে সাফল্যের পথেও পৌঁছে যেতে পারবে রাজ্য।
অন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রের পাশাপাশি সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রেও রাজ্যবাসীদের জন্য একের পর এক পদক্ষেপ নিয়ে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর ফলে, এ রাজ্যের তৃণমূল স্তরে সরকারি চিকিৎসা পরিষেবার সুফল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে, সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় হয়ে চলেছে একের পর এক সংযোজন। বাড়ির কাছাকাছি সরকারি কোনও হাসপাতালে যাতে সুপার স্পেশালিটি বিভাগের পরিষেবাও পাওয়া যায়, তার জন্য ২০২১-এর দুই অগাস্ট এ রাজ্যে চালু হয়েছে টেলিমেডিসিনের পরিষেবা ‘স্বাস্থ্য ইঙ্গিত’। এই টেলিমেডিসিনে বিভিন্ন পর্যায়ে চালু করা হয়েছে বিভিন্ন সুপার স্পেশালিটি বিভাগের পরিষেবা। এ বার ভাইরাল হেপাটাইটিস-কে যুক্ত করা হল ‘স্বাস্থ্য ইঙ্গিত’-এর পোর্টালে। এই বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, ‘এই পরিষেবা দেশে প্রথম। প্রতি বুধবার এই পরিষেবা দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘২৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার থেকে এই পরিষেবা এ রাজ্যে চালু হয়ে গেল।’
স্বাস্থ্য দফতরের এক নির্দেশে এমনই জানানো হয়েছে, এ রাজ্যে ভাইরাল হেপাটাইটিস নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইপিজিএমইঅ্যান্ডআর)-কে হাব সেন্টার করে চালু হচ্ছে ভাইরাল হেপাটাইটিস-এর টেলিমেডিসিন পরিষেবা। এই হাব-এর স্পোক সেন্টার হিসাবে আপাতত রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মোট ৩৫টি হাসপাতালকে যুক্ত করা হচ্ছে। এই সব হাসপাতাল থেকে ভাইরাল হেপাটাইটিস-এর টেলিমেডিসিন পরিষেবা প্রদান করা হবে। পরবর্তী পর্যায়ে এই পরিষেবায় সাব-হাব হিসাবে আরও চারটি সেন্টারকে যুক্ত করা হবে। স্বাস্থ্য দফতরের ওই নির্দেশে এমনই জানানো হয়েছে, ওই ৩৫টি হাসপাতালের তালিকায় রয়েছে মহকুমা, জেলা এবং মেডিক্যাল কলেজ স্তরের বিভিন্ন হাসপাতাল। এই ৩৫টি হাসপাতালকে চারটি ক্লাস্টারে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি ক্লাস্টার থেকে প্রতি মাসের একটি করে বুধবার পরিষেবা দেওয়া হবে।
ভাইরাল হেপাটাইটিস নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে এ দেশে চালু হয়েছে ন্যাশনাল ভাইরাল হেপাটাইটিস কন্ট্রোল প্রোগ্রাম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাল হেপাটাইটিস-এ থেকে ভাইরাল হেপাটাইটিস-ই, প্রধানত এই পাঁচ ধরনের ভাইরাল হেপাটাইটিস দেখা যায়। এর মধ্যে ভাইরাল হেপাটাইটিস-বি এবং ভাইরাল হেপাটাইটিস-সি চিন্তার বিষয়। এই ভাইরাল হেপাটাইটিস-বি এবং ভাইরাল হেপাটাইটিস-সি-কে নোটিফায়েবল ডিজিসেস-এর তালিকায় রাখা হয়েছে। জাতীয় কর্মসূচি অনুযায়ী, ২০৩০-এর মধ্যে ভাইরাল হেপাটাইটিস-এর নতুন কেস ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনা এবং ভাইরাল হেপাটাইটিসে মৃত্যুর হার ৬৫% কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।