পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: অসমে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে খ্রিস্টান, মুসলিমদের টার্গেট করছে হেমন্ত বিশ্ব শর্মা। নানা কৌশলে তাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে রাজ্য বিজেপি সরকার। উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্যে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও স্বাধীনতা সংকটে। শুক্রবার উদ্বেগ প্রকাশ করে এমনটাই মন্তব্য করল রাজ্য খ্রিস্টান সংগঠন। এদিন সংগঠনের তরফে জানানো হয়, ‘ধর্ম’ আর ‘রাজনীতি’ আপাতদৃষ্টিতে দুটি আলাদা শব্দবন্ধ হলেও অসমের ক্ষেত্রে তা ভিন্ন নজির সৃষ্টি করেছে। উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে ধর্ম, রাজনীতি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার বিরুদ্ধে বরাবরই বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ ছিল। এবার প্রকাশ্যে সংখ্যালঘুদের হুমকি দিচ্ছে তাঁর দলবল। সাম্প্রতিক সময়ে এই অত্যাচার মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেছে। প্রথমে মুসলিমদের টার্গেট করা হত। তবে ক্রমশই খ্রিস্টানদেরও টার্গেট করতে শুরু করেছে ওরা। মিশনারি স্কুলগুলি থেকে ধর্মীয় প্রতীক, ধর্মগ্রন্থ, যিশুর মূর্তি অপসারণের জন্য রীতিমতো হুমকি দিচ্ছে রাজ্যের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। এমনকি সরস্বতী পুজো করার জন্যও চাপ দেওয়া হচ্ছে তাদের। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি প্রতিনিয়ত স্কুলে এসে ঝামেলা করছে। যা তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘন বলেই মনে করছে খ্রিস্টান সংগঠনগুলি। উল্লেখ্য, অসমের জনসংখ্যার ৩.৭৪ শতাংশ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। ৩০০ টিরও বেশি মিশনারি স্কুল রয়েছে এই রাজ্যে।
এদিন সংগঠনের তরফ থেকে জানানো হয়, রাজ্য জুড়ে কতজন ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন, তাঁদের জন্য কটা গির্জা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ রয়েছে বৃহস্পতিবার তা নিয়ে একটি সমীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে হিমন্ত সরকার। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ সেখানকার খ্রিস্টানরা। এই সমীক্ষাকে বৈষম্যমূলক আচরণ বলে মনে করছে তারা।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর রাজ্যজুড়ে নয়া নির্মিত গির্জা, মসজিদ, ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কত জানার একটি নির্দেশিকা জারি করেছিল হিমন্ত সরকার। এছাড়াও গত ৬ বছরে কতজন মানুষ ধর্ম পরিবর্তন করেছেন এবং কেন করেছেন, সে সম্পর্কিত একটি প্রতিলিপি পেশ করার কথা জানিয়েছিল তারা। তখন এসব তথ্য দেওয়া হলে ফের কেন এই ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে, উঠছে প্রশ্ন। অসম সরকারের এই সমীক্ষা রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে ভয় দেখানোর চেষ্টা বলে মনে করছে শিলং ও মেঘালয়ের ক্যাথলিক সংগঠন। এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তারা।
চাপের মুখে পড়ে সুর পরিবর্তন করে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এদিন জানান, এই সমীক্ষাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এটি একটি পুলিশি বিষয়। কাউকে হয়রানি করা তাঁদের উদ্দেশ্য নয়। তবে মিশনারি স্কুলে খ্রিস্টান ধর্ম ছেড়ে হিন্দু ধর্ম চর্চার দাবীতে সুর চড়িয়েছে রাজ্যের ‘কুটুম্ব সুরক্ষা পরিষদ’ নামে একটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজ্যের খ্রিস্টান ধর্মগুরুরা মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার সঙ্গে এই বিষয়ে একটি বৈঠক করার পরিকল্পনা করছে।