কিবরিয়া আনসারী: অবশেষে মুর্শিদাবাদ জেলার ডোমকল মহকুমাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হতে চলছে। কাটতে চলেছে দুর্ভোগের দিন। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী মার্চ মাসের মধ্যে চালু হবে ডোমকল মহকুমা আদালত। শনিবার বিকেলে আদালত পরিদর্শনে এসে এমনটাই আশা প্রকাশ করেছেন রাজ্যের বিচার বিভাগীয় দফতরের প্রধান সচিব সিদ্ধার্থ কাঞ্জিলাল। তিনি জানিয়েছেন, “সমস্ত পরিকাঠামো তৈরি হয়ে রয়েছে। সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে। সেগুলো দ্রুত সম্পন্ন করে আদালত চালু করা হবে।”
ডোমকল মহকুমা আদালতের প্রসাদসম ভবণ তৈরি হয়ে দীর্ঘদিন পড়ে রয়েছে। আইনজীবী মহল থেকে মহকুমার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি, দ্রুত আদালত চালু করার। তবে ঠিক কি কারণ কোর্ট চালু হচ্ছে না, তা নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছেন সকলেই। আদালত চালু হতে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ইতিমধ্যে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে। প্রথম ধাপে সিভিল কোর্ট দিয়েই আদালতের কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে ক্রিমিন্যাল কোর্ট ও ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট চালু হবে বলে আশা করা হয়েছিল।
শনিবার বিকেলে আদালত পরিদর্শনে এসে সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখেন রাজ্যের বিচার বিভাগের প্রধান সচিব সিদ্ধার্থ কাঞ্জিলাল। পরিকাঠামো থেকে অন্যান্য বিষয়ে কোনও খামতি রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখেন তিনি। আদালত ভবণে এখনো ইলেকট্রিক সংযোগ এবং ফার্নিচারের ব্যবস্থা হয়নি। সেগুলো দ্রুত সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি পূর্ত বিভাগকে আদালত ভবন হস্তান্তরের কথাও বলেছেন রাজ্যের সচিব। সিদ্ধার্থ কাঞ্জিলাল বলেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ও রাজ্যের আইনমন্ত্রী দ্রুত আদালত চালু করতে উদ্যোগী হয়েছেন। সরকারি কর্মীর কারণে এটি চালু করতে একটু সময় লাগছে। ইতিমধ্যে বিষয়গুলি অর্থ দফতরে পাঠানো হয়েছে। সেখানে অনুমোদন মিললেই আদালত চালু হয়ে যাবে।” আশা প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, “ডোমকলবাসীর কাছে এটা গর্বের বিষয়, তাঁরা জেলার সব থেকে বড় ও আধুনিক মানের আদালত পেতে চলেছেন। যে কোনও উপায়ে আদালত চালু হবে। মার্চের মধ্যে অন্তত একটি কোর্ট চালু হবেই।”
প্রসঙ্গত, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের সাগরপাড়া, জলঙ্গি, রানিনগর সহ ডোমকল ও ইসলামপুর থানার বাসিন্দাদের এতদিন বহরমপুর আদালতে আসতে হত বিচারের জন্য। ৬৫-৭০ কিমি দূর থেকে বিচারের জন্য বহরমপুর আদালতে আসতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হত বিচার প্রার্থীদের। জলঙ্গির বাসিন্দা কবিরুল শেখ বলেন, ভোরে বেরিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যেত। কোনওদিন আবার আদালতের কাজ ব্যাহত হওয়ায় হতাশ হয়েই ফিরতে হতো। জেলার কান্দি, জঙ্গিপুর, লালবাগ ও বহরমপুর সদর মহকুমায় বিচারালয়ের ব্যবস্থা থাকলেও এতদিন পিছিয়ে ছিল ডোমকল। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় মানুষ ও আইনজীবীরা ডোমকলে মহকুমা আদালতের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। দীর্ঘদিন আগে ডোমকল এসডিও অফিস সংলগ্ন ফাঁকা মাঠে বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে ঝাঁ চকচকে প্রসাদসম মহকুমা আদালত। বিশাল ভবনের পাশাপাশি আধুনিক পরিকাঠামো নিয়েই ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
ডোমকল বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক রবিউল ইসলাম জানান, ‘আমরা দীর্ঘদিন থেকে মহকুমা আদালতের দাবি জানিয়ে আসছি। আমাদের গর্ব, রাজ্যের মধ্যে সব থেকে বড় এবং সুন্দর মহকুমা আদালত ডোমকলে তৈরি হয়েছে। এই একটা জায়গায় আমরা অসম্পূর্ণ ছিলাম। আমাদের সেই খামতি মিটতে চলেছে। আমাদের স্বস্তি, বিচারের জন্য আর বহরমপুর ছুটতে হবে না।’ এদিন প্রধান সচিব সিদ্ধার্থ কাঞ্জিলাল এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা জর্জ ভাস্কর ভট্টাচার্য, সিজেএম অলোকেশ দাস, বহরমপুর বার এসোসিয়েশনের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিকী, সম্পাদক দেবাশীষ রায়, ডোমকল বার এসোসিয়েশনের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সম্পাদক রবিউল ইসলাম প্রমুখরা।