আহমদ হাসান ইমরান: আমেরিকা ‘সুপার বাউল’ নিয়ে মেতেছিল। বলা যায়, সুপার বাউল শুধু খেলা নয়, আমেরিকার এক বড় উৎসব। অন্যদিকে যায়নবাদী ইহুদি সেনাদের দ্বারা প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত গাজায় চলছে মৃত্যু উৎসব। তাতে প্রধান শিকার হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নারী, শিশু ও পুরুষ। হাসপাতাল, মসজিদ, চার্চ-সহ নাগরিক জীবনে বেঁচে থাকার মতো সমস্ত পরিকাঠামোর কিছুই আর অবশিষ্ট নেই অবরুদ্ধ গাজায়। এই নির্মম, নৃশংস ও ভয়াবহ গণহত্যার চার মাস পেরিয়ে গেছে। মঙ্গলবার এই গণহত্যার ১৩০ দিন চলছে।
চারিদিক থেকে অবরুদ্ধ গাজার রাফা সীমান্তে (মিশরের নিকটবর্তী) এখন হত্যাযজ্ঞকে কেন্দ্রিভূত করেছে যায়নবাদী সেনারা। তারা এখানে বোমা, মিসাইল, কামানের গোলা, বিমান হামলা সবকিছুর মাধ্যমে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। মারা যাচ্ছে মানুষ। অসহায় বেসামরিক মানুষ। অথচ রাফা শহরে ‘আশ্রয়’ নিয়েছে গাজার ১৪ লক্ষেরও বেশি ফিলিস্তিনি। ‘আশ্রয়’ না বলে অবস্থান করছে বলা ভালো। কারণ, এরা রয়েছে প্রায় খোলা আকাশের নীচে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কোনও ব্যবস্থা নেই। নেই চিকিৎসার কোনও আয়োজন। প্রচন্ড শীতের মধ্যে এমনিতে অনেকে মারা যাচ্ছে। প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির আরও কারণ হচ্ছে, এদের কাছে কোনও খাবার বা পানীয় জল নেই। ইসরাইলি যায়নবাদীরা রাফাকে প্রায় কারবালা করে রেখেছে। আর একইসঙ্গে চলছে ইসরাইলি বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্রসমূহের হামলা। গ্রাউন্ড অপারেশন করার জন্য এই অসহায় মানুষের দিকে রাইফেস উঁচিয়ে এগিয়ে আসছে ইসরাইলি স্থলবাহিনী। অবশ্য এই অসহায় ফিলিস্তিনিদের মারার জন্য গুলি খরচ করারও হয়তো প্রয়োজন নেই। বেয়নট দিয়েও তারা মেরে ফেলতে পারে ফিলিস্তিনিদের।
আসলে ইসরাইল চায় এই আর্ত, ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের রাফা সীমান্ত দিয়ে মিশরে ঠেলে দিতে। কিন্তু মিশর এই ফিলিস্তিনিদের কোনোভাবেই গ্রহণ করতে নারাজ। মিশরের স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট আল সিসি জানে, অবরুদ্ধ গাজার এই ফিলিস্তিনিরা মিশরে ঢুকে পড়লে ইসরাইলেরই জিত হবে। আর কঠিন সমস্যায় পড়বে মিশর। এই টানাটানিতে ফিলিস্তিনিদের কী হবে, তা কেউ ভাবছে না। অথচ ইসরাইল বলছে, ফিলিস্তিনিরা তোমরা রাফা থেকে পালিয়ে যাও। আমাদের আক্রমণ পুরোপুরি শুরু হলে কেবল থাকবে তোমাদের লাশ আর লাশ। কিন্তু সভ্য দেশ যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউকে, ফ্রান্স, জার্মানি কেউই বলছে না রাফা থেকে এই ফিলিস্তিনিরা কোথায় যাবে? কোথায় পালাবে? সবথেকে মজার কথা হচ্ছে, গাজায় ইতিমধ্যেই নিহতের সংখ্যা প্রায় ৩০,০০০ ছুঁতে চলেছে। আর গুরুতরভাবে জখম, চিকিৎসা বিহীন মুমূর্ষু মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭০,০০০। সব মিলিয়ে ইসরাইলের শিকারের সংখ্যা এক লক্ষ।
আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশগুলি এতদিন পরে বলছে, বাছা ইসরাইল রাফাতে অসহায় মানুষের উপর নিধনযজ্ঞ চালানো উচিত হবে না। তুমি থাম। কিন্তু ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ভালো করে জানেন, হত্যাযজ্ঞ বন্ধের জন্য রাষ্ট্র সংঘের নিরাপত্তা পরিষদ-সহ বৃহৎ শক্তিধর দেশগুলি যে আহ্বান জানাচ্ছে তা শুধু কথার কথা। যদি ইসরাইল তাদের কথায় কান না দেয়, তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এরা কিছুই করবে না। সভ্য জগতকে ভোলাবার জন্য অনিচ্ছা সত্ত্বেও তারা এই ধরনের লোভ দেখানো এবং নখ-দন্তহীন আহ্বান জানাচ্ছে। অথচ তারা এখনও এই মারণযজ্ঞের খলনায়ক ইসরাইলকে মারাত্মক সব অস্ত্র সরবরাহ এবং অর্থের জোগান বন্ধ করেনি। কাজেই বোঝা যায়, আমেরিকা এবং গংদের এইসব কথা কত ওজনবিহীন।
আর যে দুষ্টু ছেলেকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার মতো করে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীকে বলা হচ্ছে, ‘ওরে বাবা! একটু থাম না। হত্যাযজ্ঞ একটু বন্ধ কর!’ ইসরাইল জানে, এইসব বাল-খিল্য কথা লোক দেখানো। যায়নবাদীদের নীতি ও কার্যক্রমের প্রতি ইঙ্গ-মার্কিন সহায়তা অব্যাহতভাবে চলবে।
এরপর আগামী সংখ্যায়