পুবের কলম প্রতিবেদক: রোগ ধরা পড়ার পর নিয়মিত ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। বছরের পর বছর ধরেও চলতে থাকে ওষুধ। তবে, এমন দেখা যায়, বহু রোগী রয়েছেন যারা ঠিকমতো ওষুধ খান না কিংবা, ওষুধ কিনে খেতে পারেন না। এর পাশাপাশি রয়েছে অজ্ঞতার বিষয়টিও। এপিলেপসি বা মৃগী রোগের বিষয়ে এমনই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে আরও সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন।
গোটা পৃথিবীতেই এপিলেপসি বা মৃগী বেশ কমন একটি রোগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি এক হাজার অথবা দুই হাজার মানুষের মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাঁর জীবনের কোনও না কোনও সময় তিনি এই রোগে আক্রান্ত হন। কোথাও কোথাও, বিশেষ করে গরিব দেশগুলিতে এই রোগ বেশি দেখা যায়। এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সোমবার পালন করা হয় ইন্টারন্যাশনাল এপিলেপসি ডে। ২০২৪-এ এই দিবস ১২ ফেব্রুয়ারি।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, ‘এপিলেপসি ধরা পড়ার পর থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেয়ে যেতে হবে। চিকিৎসক না বললে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করা যাবে না।’ সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে এই রোগের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে বলেও তিনি জানান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এপিলেপসির চিকিৎসার জন্য গত ৩০ বছরে অনেক ওষুধ এসেছে। কোনও রোগীর ক্ষেত্রে যেমন পুরোনো কোনও ওষুধ ভালো কাজ করে, তেমনই নতুন কোনও ওষুধ ভালো কাজ করে কোনও রোগীর ক্ষেত্রে। নতুন ওষুধগুলির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও তুলনায় কম। কিন্তু, পুরোনো ওষুধগুলির তুলনায় নতুন ওষুধগুলির দাম কয়েকগুণ বেশি।
কিছু কিছু এপিলেপসি রয়েছে, যেখানে দীর্ঘ বছর ধরে ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্যের সমস্যা হিসাবে মানুষের দারিদ্রতার বিষয়টি রয়েছে। এ কথা জানিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর দুর্গাপ্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, ‘অনেক রকমের ওষুধ রয়েছে। পুরোনো ওষুধগুলির দাম মানুষের আয়ত্তের মধ্যে। কিন্তু নতুন যে সব ওষুধ রয়েছে, সে সবের যা দাম, তাতে মনে হয় আমাদের দেশের ৬০-৭০% মানুষের পক্ষে বছরের পর বছর ধরে এই ওষুধ কিনে খাওয়ার বিষয়টি খুবই কঠিন।’
বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, ‘এই রোগটি সারিয়ে তোলা কিংবা নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে চিকিৎসার থেকেও বেশি সমস্যা হচ্ছে মানুষের দারিদ্রতা এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থা। বহু রোগী রয়েছেন যারা ঠিকমতো ওষুধ খান না কিংবা, ওষুধ কিনে খেতে পারেন না। এর পাশাপাশি রয়েছে অজ্ঞতার বিষয়টিও।’ তাঁর কথায়, ‘কেউ হয়তো একটু ভালো থাকলেন। হয়তো অন্য কেউ তাঁকে বললেন ওষুধ আর খেতে হবে না। এই ক্ষেত্রে ভয়ংকর ভাবে আবার ফিরে আসতে পারে এই রোগটি। দীর্ঘ সময় ধরে এপিলেপসি চলতে থাকলে, তাতে ইমারজেন্সির ভিত্তিতে চিকিৎসার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে, এক্ষেত্রে মৃত্যু হার বেশি।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এপিলেপসি-তে যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায় ততই ভালো। যে কোনও বয়সেই হতে পারে এই রোগ। তবে, অনেক সময় রোগ নির্ণয় করতে দেরি হয়। চিকিৎসক দুর্গাপ্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, ‘এই রোগটি ৮০-৯০ ক্ষেত্রে সেরে না গেলেও, এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।’ তাঁর কথায়, ‘জ্ঞান ফিরে আসার পর সাধারণত দেখা যায় লোকজনকে চিনতে পারছেন না রোগী, তিনি আচ্ছন্ন একটা ভাবের মধ্যে রয়েছেন, ভুলভাল কথা বলছেন। এই অবস্থা কিছু ক্ষণ থাকতে পারেন। এক্ষেত্রে মানুষের অজ্ঞতার কারণে অন্য রকমের ধারণার তৈরি হয়।’ ফলে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে এপিলেপসি বা মৃগী রোগের বিষয়ে আরও বেশি সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।