পুবের কলম প্রতিবেদক: মশার কামড়ে হয় এই রোগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোগ হলে নিরাময় সম্ভব হয় না। এদিকে, তৈরি হয় শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। তাই, মশাবাহিত এই রোগ যাতে না হতে পারে, তার জন্য প্রতিরোধের বিষয়টি এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই রোগটির নাম ফাইলেরিয়াসিস। গোদ নামেও পরিচিত এই রোগ। এই পরিস্থিতির মধ্যে ফাইলেরিয়াসিস নির্মূল করার লক্ষ্যে সক্রিয় রাজ্য সরকার। আর, এই লক্ষ্য পূরণের জন্য ফাইলেরিয়াসিসের বিষয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে আরও সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, এই রোগ প্রতিরোধের জন্য ঘরে ঘরে প্রতিষেধক ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর।
মশাবাহিত অসুখ দেখা যায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে, ভারতে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জাপানিস এনসেফালাইটিস এবং ফাইলেরিয়াসিস বা গোদ, এই পাঁচটি রোগ সাধারণত দেখা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফাইলেরিয়াসিস বা, ফাইলেরিয়া রোগ থেকে গোদ বা হাইড্রোসিলের মতো শারীরিক প্রতিবন্ধকতা দেখা দিতে পারে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী ২০২৩-এ দেখা গিয়েছে, এ রাজ্যে ৩৫,৯৭৪ লিম্ফোডেমা এবং ৯,৯৭৬ হাইড্রোসিলে ভুগছেন এমন ফাইলেরিয়াসিসের রোগী রয়েছেন। এই বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেছেন, ‘মশার কামড়ে ফাইলেরিয়া রোগ হয়। আমাদের দেশে এটা একপ্রকার ক্রান্তীয় অবহেলিত রোগ বলা যায়। মুশকিল হল, সঠিক সময়ে এই রোগ প্রতিরোধ না করলে এবং একবার গোদ বা হাইড্রোসিলের মতো উপসর্গ শরীরে দেখা দিলে, ওষুধের মাধ্যমে তা আর নিরাময় সম্ভব নয়।’
এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে, এ রাজ্যে ফাইলেরিয়াসিস নির্মূল করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে মাস ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এমডিএ)-এর কর্মসূচি। স্বাস্থ্য দফতর থেকে জানানো হয়েছে, এমডিএ কর্মসূচির আওতায় এই রাজ্যকে ফাইলেরিয়াসিস রোগ থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যকর্মীরা আটটি জেলায় ঘরে ঘরে গিয়ে এই রোগের প্রতিরোধক ওষুধ দেবেন। এই কর্মসূচি চলবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এই কর্মসূচিতে বাঁকুড়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, পুরুলিয়া, উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলার, ৩৬টি ব্লক এবং দু’টি পৌরসভায় ওষুধ খাওয়ানো হবে। প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের সামনেই এই ওষুধ খেতে হবে। দুই বছরের কমবয়সি শিশু, গর্ভবতী মহিলা, এবং গুরুতর অসুস্থতা ছাড়া অন্য সকলকে এই ওষুধ খাওয়ানো হবে।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলেন, ‘আপনার গ্রামে বা পাড়ায় এমডিএ চলাকালীন সকলের উচিত ফাইলেরিয়া প্রতিরোধক ওষুধ খেয়ে নেওয়া। এতে আপনার এলাকায় ফাইলেরিয়া রোগের সংক্রমণ বন্ধ হবে। এর পাশাপাশি বাচ্চাদের কৃমির অসুবিধা থাকলে, তাও সেরে যাবে।’ স্বাস্থ্য দফতর থেকে জানানো হয়েছে, এ রাজ্যের সব সরকারি হাসপাতালে হাইড্রোসিল অপারেশনের ব্যবস্থা রয়েছে। যারা গোদে আক্রান্ত, তাঁদের হাত-পা ফোলা, ব্যথা, জ্বর এমন বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা কমানোর জন্য সরকারি স্তরে ব্যবস্থা রয়েছে। এমডিএ কর্মসূচিতে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে বিনামূল্যে ডিইসি এবং অ্যালবেন্ডাজোল নামে দু’টি ওষুধ খাওয়ানো হয়। এই ওষুধগুলি সম্পূর্ণ নিরাপদ। ২০২৭-এর মধ্যে এই রাজ্য থেকে যাতে ফাইলেরিয়াসিস রোগ নির্মূল করা যায়, সেই লক্ষ্যে এমডিএ কর্মসূচিতে পরিবারের সকলের কাছে ওষুধ খাওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে।