মোল্লা জসিমউদ্দিন: বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে উঠে সন্দেশখালি মামলা।সন্দেশখালি ঘটনায় সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। গত ১৭ জানুয়ারি কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত এই ঘটনার তদন্তে সিবিআই এবং রাজ্য পুলিশের যে যৌথ সিট গঠন করেছিলেন তাতে স্থগিতাদেশ দিল প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ।
শুধু তাই নয় এই ঘটনা নিয়ে যে অন্য এফআইআরগুলো দায়ের হয়েছিল তার ভিত্তিতে রাজ্য পুলিশ এখনই কোনও তদন্ত করতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। আগামী ৬ মার্চ মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে ।আইনজীবীদের একাংশ মনে করছে -‘ প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের এই নির্দেশে কিছুটা স্বস্তি পেল ঘটনার মূল অভিযুক্ত শেখ শাহজাহান’।
তবে মূল অভিযুক্ত শাজাহান কোন আগাম জামিনের আবেদন জানালে তার বিরোধিতা করতে পারবে কেন্দ্রীয় আর্থিক তদন্তকারী সংস্থা ইডি, নির্দেশে এমনটাই জানিয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতার বাড়িতে তল্লাশি অভিযানে গিয়ে আক্রান্ত হন ইডি আধিকারিকরা।
একাধিক ইডি অফিসার আহত হন, মাথা ফাটে অনেকের। তাঁদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়, মোবাইল ভেঙে দেওয়া হয়।ওই ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের সিঙ্গল বেঞ্চ সিবিআই ও রাজ্য পুলিশকে নিয়ে সিট গঠন করে যৌথভাবে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। এই নির্দেশের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় ইডি। তাদের দাবি , -‘ রাজ্য পুলিশ এর আগে একাধিক মামলায় সিবিআইয়ের সাথে অসহযোগিতা করেছে। এক্ষেত্রেও সেই আশঙ্কা রয়েছে।
তাই তদন্তভার দেওয়া হোক শুধুমাত্র সিবিআইয়ের হাতে’। সন্দেশখালি ঘটনা একমাস পেরিয়ে গেছে, এখনও ফেরার সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ। এরই মাঝে গোপন ডেরা থেকেই আইনজীবী মারফত নিজের আগাম জামিনের আবেদন করেছেন শাহজাহান। ইডির ভূমিকা নিয়ে আদালতে প্রশ্নও তুলেছেন ‘ফেরার’ তৃণমূল নেতার আইনজীবী।ইডির দাবি, -‘অন্তরালে থেকেই পেপারওয়ার্ক করে যাচ্ছেন শাহজাহান’।
তাই দ্রুত শাহজাহান মামলার শুনানির আর্জি জানিয়ে চলতি সপ্তাহের শুরুতেই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের এজলাসে আবেদন জানিয়েছিল ইডি। বুধবার ওই মামলার শুনানিতে যৌথ তদন্ত এবং রাজ্যের তদন্তেও স্থগিতাদেশের নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ।
এদিনের শুনানির সময়ে ইডি-র আইনজীবী এস ভি রাজু সওয়াল করে বলেন, “খুব সিরিয়াস একটি বিষয়। রাজ্য এক্ষেত্রে তদন্ত করলে পক্ষপাতদুষ্ট হবে। একজন মন্ত্রী জড়িত, সেখানে রাজ্য পুলিশ কীভাবে তদন্ত করতে পারে? জয়েন্ট টিম এর পারপাস ক্লিয়ার করতে পারবে না।” সিবিআই তদন্তের দাবি জানান ইডির আইনজীবী ।
ইডি দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানায়, -‘এর আগেও এই মামলা যখন সিঙ্গল বেঞ্চে বিচারাধীন ছিল, তখন বারবার এ প্রশ্ন উঠে এসেছে, মূল অভিযুক্ত প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তবুও তাঁকে কেন গ্রেফতার করতে পারছে না পুলিশ। এখনও পর্যন্ত শেখ শাহজাহান অধরা’।এদিনের শুনানিতে ইডি-র বক্তব্যের পর প্রধান বিচারপতি আর কারোর বক্তব্য কার্যত শুনতে চাননি। প্রধান বিচারপতি সরাসরি সিট এর তদন্তের ওপর অন্তবর্তী স্থগিতাদেশের নির্দেশ দেন।
একইভাবে রাজ্য সরকারের পুলিশ যে কটি তদন্ত করছিল, সব কটির ওপরই স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়।উল্লেখ্য, গত ৫ জানুয়ারি রেশন দুর্নীতি তদন্তে সন্দেশখালির সরবেড়িয়া গ্রামের তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে হানা দিয়েছিলেন ইডি আধিকারিকরা।
শাহাজাহানের বাড়ির দরজার তালা ভাঙার সময়ে গ্রামবাসীদের বড় অংশ ইডি আধিকারিকদের ঘিরে ধরেন। বাঁশ, লাঠি, লোহার রড নিয়ে মারধর করেন। কয়েকজন ইডি আধিকারিকের মাথা ফেটে যায়। কোনওক্রমে পালিয়ে বাঁচেন সিআরপিএফ জওয়ানরা। তারপর ইডি-র তরফে এফআইআর করা হয়। চলতি সপ্তাহের শুরুতেই এই মামলার দ্রুত শুনানির আর্জি জানায় ইডি।বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ সিটের তদন্তে স্থগিতাদেশ দিল।