পুবের কলম প্রতিবেদক: ‘ডু অর ডাই’। এমনই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল এ ক্ষেত্রে। এর ব্যাখ্যা হিসাবে এমনই বলা হয়েছে, রোগীর চোখ ঠিকরে বেরিয়ে এসেছিল। এ ক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন ছিল। অথচ, জটিল এবং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ওই অপারেশনের কারণে একদিকে যেমন নষ্ট হয়ে যেতে পারত চোখ, তেমনই অন্যদিকে এই অপারেশন করানো না হলেও চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারত। তবে, অবশেষে সফল অপারেশনের জেরে রোগীর অন্ধত্ব রুখে দিল সরকারি হাসপাতাল।
চোখের পিছনে বেড়ে উঠেছিল বড় মাপের এক টিউমার। যার জেরে ঠিকরে বেরিয়ে এসেছিল মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা বছর ২৯-এর আশিয়া বেগমের ডান চোখ। এই অবস্থায় তাঁর ওই চোখের পাতা আর বন্ধ হচ্ছিল না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এমনই বলছেন, চোখের পাতা বন্ধ না হলে অর্থাৎ, খোলা থেকে গেলে একসময় চোখ শুকিয়ে যাবে, মণি শুকিয়ে যাবে। যার পরিণতিতে নষ্ট হয়ে যাবে চোখ। এ দিকে, তিন বছর ধরে অন্য এক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগে এই রোগীর চিকিৎসা চলছিল।
জানা গিয়েছে, ওষুধের মাধ্যমে তাঁর ডান চোখের পিছনে থাকা ওই টিউমার সারিয়ে তোলার চেষ্টা চলছিল। তবে, এই অবস্থা চলতে চলতে ওই টিউমারের কারণেই আশিয়া বেগমের ডান চোখ একসময় ঠিকরে বেরিয়ে এসেছিল। এই অবস্থায় তাঁকে পাঠানো হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরে অবস্থিত রিজিওন্যাল ইনস্টিটিউট অফ অফথ্যালমোলজি (আরআইও)-তে ( At Regional Institute of Ophthalmology (RIO))
এই রোগীর চিকিৎসার বিষয়টি নিয়ে আরআইও-র চিকিৎসক, অধ্যাপক সলিলকুমার মণ্ডল বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে যেভাবেই হোক না কেন, ওই টিউমার বের করা না হলে ঠিকরে বেরিয়ে আসা চোখের অবস্থান আবার আগের জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না। তবে এই অপারেশনে অনেক ঝুঁকির ছিল।’ তিনি বলেন, ‘রোগীর বাড়ির লোকদের জানিয়ে দেওয়া হয়, এই টিউমার বের করতে গেলে যে অপারেশন প্রয়োজন, সেই অপারেশনের কারণে দৃষ্টি শক্তি চলে যেতে পারে, চোখের মুভমেন্ট নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আবার, অপারেশন না করানো হলেও চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।’
এমন ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও এক সন্তানের মা আশিয়া বেগমের চোখ ঠিক করার জন্য রাজি হন বাড়ির লোকরা। অধ্যাপক সলিলকুমার মণ্ডল বলেন, ‘রোগীকে অজ্ঞান করে জটিল এবং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এই অপারেশনের মাধ্যমে পুরো টিউমার বের করা সম্ভব হয়েছে। ফলে নর্মাল অবস্থানে ফিরে আসে চোখ।’ তিনি বলেন, ‘চোখের পাতা প্রথমে নিচে নেমে গিয়েছিল। রোগী ফলোআপে এসেছেন।
এখন চোখের পাতা নরমাল হয়ে গিয়েছে।’ এই চিকিৎসক বলেন, ‘এমন টিউমারের কারণে অপটিক নার্ভ ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেশি থেকে যায়। এর ফলে অন্ধত্বের আশঙ্কাও থেকে যায়। এক্ষেত্রে অপারেশন না করানো হলেও বিপদ ছিল, আবার অপারেশনের সময়ও হতে পারত বিপদ। অর্থাৎ, ডু অর ডাই-এর অবস্থা দেখা দিয়েছিল।’ বেসরকারি হাসপাতালে এমন চিকিৎসার জন্য এক লাখ টাকার মতো খরচ হতে পারে। তবে, আশিয়া বেগমের চিকিৎসা হয়েছে বিনামূল্যে সরকারি হাসপাতালে।