বিশেষ প্রতিবেদন: কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ষষ্ঠ বাজেটে, ২০২৩–২৪ সালের জন্য মেক–ওয়ার্ক মনরেগা প্রকল্পের জন্য ৮৬০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। যা আগের বাজেটের ৬০,০০০ টাকার (২০২৩–২৪) থেকে ৪৩ শতাংশ বেশি। ২০২৩–২৪ সালের এই প্রকল্পের সংশোধিত বরাদ্দ টাকা আগামী অর্থবর্ষের জন্য ব্যয়ের সমান।
গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্পের জন্য ৮৬ হাজার কোটি টাকা, যা গত বাজেটের বরাদ্দের থেকে প্রায় ৪৩.৩৩% বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও কেন্দ্রীয় গ্রামীণ উন্নয়ন মন্ত্রকের মতে এই কর্মসূচির জন্য ইতিমধ্যেই মোট ব্যয় হয়েছে ৮৮, ৩০৯ কোটি টাকা। মহাত্মা গান্ধি জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি স্কিম এর ৮৬ হাজার কোটি বরাদ্দের সঙ্গে, ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরের জন্য এই প্রকল্পের বাজেট ২০২৩-২৪ বাজেটের অনুমানের তুলনায় ২৬ হাজার কোটি বাড়ানো হয়েছে, যদিও এটি চলমান আর্থিক বছরের (২০২৩-২৪) সংশোধিত অনুমানের সমান। সুতরাং, গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্পের জন্য নিট লাভ শূন্য বলা যেতে পারে। বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী বাজেটে একশো দিনের কাজের জন্য বাড়তি একটি পয়সাও বরাদ্দ করল না নরেন্দ্র মোদি সরকার। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে পাওয়া পরিসংখ্যান অনুসারে, এই প্রকল্পে এখনও পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে ৮৮, ৩০৯.৭২ কোটি।
সূত্রের খবর, ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, কেন্দ্র রাজ্য সরকারগুলির কাছে মজুরি বাবদ ১৬ হাজার কোটি পাওনা।
সরকার যুক্তি দিয়েছে যে মনরেগা গতিশীল স্কিম এবং বকেয়া চক্রবৃদ্ধি হারে পরিশোধ করা হয়। কিন্তু গত দুই বছর ধরে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতির দাবি করে কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গে কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছে। কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের পাওনা ৭ হাজার কোটি টাকা।
তবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এই বাজেটে কোনও চমকপ্রদ কিছু থাকবে না। পাশাপাশি ২০২৪ সালের বাজেট, প্রচলিত বাজেট কমানোর অব্যাহত প্রবণতাকে ভেঙে দিয়েছে। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে (রেগা) বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে ৬০,০০০কোটি টাকা। যা গতবছরে ছিল ৭৩,০০০কোটি টাকা। তার আগের বছর, অর্থাৎ ২০২১-২২-এ এই প্রকল্পে বাজেট বরাদ্দ ছিল ৯৮,৪৬৮কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এবার রেগায় বাজেট বরাদ্দ কমানো হয়েছে ১৭.৮০%। ২০২১-২২-র তুলনায় তা আরও বেশি — ৩৯.০৬%! সংখ্যালঘু উন্নয়নেও ব্যাপক বরাদ্দ ছাঁটাই হয়েছে। গত বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ১৮১০কোটি টাকা। এবার সেই বরাদ্দ নেমে এসেছে ৬১০কোটি টাকায়। কমেছে ৬৬.২৯%।
আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাজেন্দ্র নারায়ণনের বক্তব্য অনুযায়ী, প্রকল্পটি কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ এখনও অনেক কম। সংশোধিত অনুমানের সঙ্গে মিলে যাওয়া গ্রামীণ দুর্দশার চিহ্ন স্পষ্ট ।
গ্রামীণ সড়ক যোজনায় বরাদ্দ একটি টাকাও বাড়ানো হয়নি। যা ছিল তাই। অর্থাৎ ১৯,০০০কোটি টাকাই রয়েছে। কমানো হয়েছে শস্য বীমা যোজনায় বরাদ্দও। গত আর্থিক বছরে বাজেট বরাদ্দ ছিল ১৫,৫০০কোটি টাকা। তা এবারে করা হয়েছে ১৩,৬২৫ কোটি টাকা। এছাড়া সুসংহত স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মসূচি প্রকল্প–সহ ‘কোর’হিসাবে মনোনীত অন্যান্য সমস্ত সিএসএসের জন্য, অন্তর্বর্তী বাজেটে ২০২৪–২৫ সালের জন্য মোট ৩.৮ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। অপুষ্টি মোকাবিলায় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের সক্ষম অঙ্গনওয়াড়ি এবং পোষণ ২.০ প্রকল্পতে ৩ শতাংশ (২১,২০০ কোটি টাকা) বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এই কর্মসূচিগুলির লক্ষ্য শিশু, কিশোরী, গর্ভবতী এবং মহিলাদের দুর্বল স্বাস্থ্য মোকাবিলা করা।
এই প্রকল্পের বরাদ্দ বৃদ্ধি নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য ‘মাতৃ ও শিশু যত্নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পকে বাস্তবায়ন করতে সমন্বয়ের জন্য বড় কর্মসূচির আওতায় আনা হবে। উন্নত পুষ্টি প্রদান, শৈশবকালীন যত্ন এবং উন্নয়নের জন্য সক্ষম অঙ্গনওয়াড়ি এবং পোষণ ২.০ প্রকল্পের অধীনে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির উন্নয়ন দ্রুত করা হবে।’ পশ্চিমবঙ্গের কাছে এই বাজেট নিয়ে কোনও আশার আলো দেখা যায়নি। অতীতে বকেয়া পরিশোধের বাজেটে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ব্যয় করার প্রবণতার সঙ্গে বরাদ্দ ক্রমশ অপর্যাপ্ত বলেই মনে করা হচ্ছে।