কারও সারাদিন শুধু বসে বসে কাজ– তো কারও ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৫-১৬ ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে কাজ। কেউ সারাদিন কম্পিউটার বা ল্যাপটপে কাজে মগ্ন– তো কারও পার্লারে বা রেস্তরাঁয় কাজ করার সময়ে ঘন্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা। আর এতে করেই নানারকম ব্যথা-বেদনা শরীরে বাসা বাঁধছে। সেপ্টেম্বর মাস হল ব্যথা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির মাস। তাই ব্যথা থেকে দূরে থাকার কিছু সহজ উপায়ের কথা জানালেন এক্সপার্ট ফিজিও-র কর্ণধার ডা. আইমান আফেন্দি। লিখছেন শ্যামলী বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রায় সব বয়সীদের মধ্যেই পিঠে– ঘাড়ে– হাঁটুতে বা কোমরে ব্যথার সমস্যা বাড়ছে। বর্তমান কর্মব্যস্ত জীবনে বেশিরভাগ লোকের হাঁটা– সিঁড়ি ভাঙা– জগিং-এর মতো সাধারণ শরীরচর্চা করার তেমন সময় নেই। জীবন-যাপনের এই পরিবর্তনের প্রভাব আমাদের শরীরে পড়তে বাধ্য। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে খাবারের। ‘রেডি টু ইট’ বা ‘ফাস্ট ফুড’ জাতীয় খাবারে আর যাই থাকুক না কেন– পুষ্টি থাকে না। আর বেশিরভাগ লোক এই ধরনের খাবারে অভ্যস্ত। যার ফলে ব্যথা-বেদনা শুধু নয়– অন্যান্য সমস্যাও বাড়ছে। তার ওপর আছে বাইরে না বেরনো। আগে লোকে যেটুকুও বা বেরতো– করোনার জন্য রোদের মুখই দেখা হয় না। অথচ হাড় মজবুত করার জন্য দিনে অন্তত আধ ঘণ্টা সূর্যালোক লাগানো খুব দরকার। সব মিলিয়েই এখন ব্যথার বাড়-বাড়ন্ত হচ্ছে।
তাই কীভাবে রক্ষা পাব এই ব্যথা থেকে– এটাই এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। এর থেকে রক্ষা পাওয়ার দুটো উপায়। একটা সাময়িক– আরেকটা তুলনায় বেশিদিন স্থায়ী।
প্রথমে আসা যাক সাময়িক স্বস্তির বিষয়ে—
ব্যথা বেশি হলে আমরা ডাক্তারের কাছে যাই। কিন্তু অল্পস্বল্প হলে আমরা তা করি না। অনেক সময় নিজেরা কিছু ব্যবস্থা নিলে ব্যথা কমেও যায়। মাসলের কারণে হলে উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয় সেই জায়গায় অস্বস্তি– জ্বালা– কেটে যাওয়ার মতো তীব্র কিংবা খুব সামান্য ব্যথা। আবার যদি কোথাও চাপ লাগার কারণে হলে জায়গাটা অসাড় লাগা বা চিনচিনে ব্যথা হতে পারে। কাজেই যদি আচমকাই কোথাও ব্যথা শুরু হয়– তাহলে সেই জায়গায় বরফ সেঁক দেওয়া দরকার। অনেক সময়েই এতে উপকার পাওয়া যায়। বরফের কিউব বা ‘আইস প্যাক’ ব্যথার জায়গায় দিনে ১০ মিনিট করে ২-৩ বার দেওয়া যেতে পারে। এটা করতে হবে ২-৩ দিন। এছাড়া ব্যথা জায়গা বিশ্রামে রাখা আর ফোলাভাব থাকলে সেই জায়গাটা একটু উঁচু করে রাখা যেতে পারে। প্রয়োজন হলে ক্রেপ ব্যান্ডেজ বেঁধে রাখতে হবে। বরফ সেঁক কাজ না করলে ব্যথা জায়গায় ‘হট ওয়াটার ব্যাগ’ও ব্যবহার করা যেতে পারে। এতেই সাময়িক আরাম পাওয়া যায়।
মাসলের ব্যথায় এতেও কাজ না হলে স্ট্রেচিং করলে উপকার পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে– যদি কারও হাঁটুতে ব্যথা হয়– তাহলে হ্যামস্ট্রিং অর্থাৎ থাইয়ের পিছন দিকের ও কোয়াড্রিসেপস বা সামনের অংশের ও পায়ের নীচের দিকের স্ট্রেচিং করলে উপকার পাওয়া যায়। যদি এতে ব্যথা কমছে বলে মনে হয় তাহলে দিনে ৫ বার করে দু’সপ্তাহ প্র্যাক্টিস করতে পারেন।
এবার আসা যাক দীর্ঘস্থায়ী উপশমের দিকে—
প্রথমত– স্ট্রেচিং করে যেতে হবে। তবে স্থায়ী নিরাময়ের জন্য এর সঙ্গে আরও কিছু যোগ করতে হবে। যেমন– ব্যথার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। হাঁটাচলা– বসা সব কিছুর ভঙ্গী ঠিক করতে হবে।
এক জায়গায় একভাবে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করা ঠিক নয়। যদি বসার ভঙ্গী ঠিক হয় তাহলেও মাঝেমধ্যে তা বদলাতে হবে। কারণ একভাবে থাকলে মাসলে চাপ পড়ে। তাই সবচেয়ে ভাল উপায় হল প্রতি ৩০ মিনিট অন্তর অন্তত এক মিনিট বিশ্রাম নেওয়া।
ঠিকঠাক ডায়েট করতে হবে। বেশিরভাগ লোকের খাবারে এখন ভিটামিন ডি ও ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি থাকে বলে ব্যথার প্রবণতা বাড়ে। তেমন হলে দরকার হলে সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে।
সত্যি বলতে কী– বেশিরভাগ ব্যথার কারণ ওপরের বিষয়গুলোর মধ্যেই ঘোরাফেরা করে। আর ব্যথার কারণ জানা গেলে ধীরে ধীরে তা সারানো সম্ভব হয়। আরেকটা জরুরি বিষয় হল– শরীরচর্চা করা। যে কোনও ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রতিদিনের রুটিনে কিছু প্রাথমিক শরীরচর্চা রাখতেই হবে। আর কয়েকদিনের মধ্যে ব্যথা না কমলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
যোগাযোগঃ ৯১৬৩০২৫০০১