দেবশ্রী মজুমদার, শান্তিনিকেতন: ‘তিনি আমার প্রাণের আরাম মনের আনন্দ আত্মার শান্তি’। উপাসনা গৃহ ঠিক এমনটি ছিল মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে। সেই উপাসনা গৃহের সংস্কারকাজ শুরু হল দীর্ঘ দশ বছর পর। ২০০৯ সালেও উপাসনা গৃহের সংস্কার শুরু হয়েছে। সময় লেগেছিল কর্তৃপক্ষের প্রায় ২ বছর। ওই সময় উপাসনা গৃহের সংস্কার করা হয়েছিল। ‘কাঁচমন্দির বলেই সবাই এই উপাসনা গৃহ বা ব্রহ্মমন্দিরকে চেনে। এখানে “মন্দির” বলতে প্রচলিত দেবদেবীর মন্দির বোঝানো হয় না। এখানে এক জীবন চর্চাকে মর্মগ্রাহী করা হয়।
৭ই পৌষের উপাসনার মাধ্যমেই প্রতি বছর পৌষমেলার সূচনা হত এখানেই। মহর্ষির আমলেই ঝড়-বৃষ্টি-রোদ এ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বাধাবিঘ্নের কারণে ১৮৯১ সালে গড়ে উঠেছিল ব্রহ্মমন্দির বা উপাসনা গৃহ। এই মন্দিরের শিলান্যাস ঘটেছিল ১৮৯০ সালের ৭ ডিসেম্বর। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর মন্দির স্থাপনার আদর্শ ও উদ্দেশ্য নিয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন। আর ওই সময় রবীন্দ্রনাথ ব্রহ্মসঙ্গীত গেয়েছিলেন। ১৮৯১ সালের ২১ ডিসেম্বর মন্দিরের আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন করেছিলেন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেবারও রবীন্দ্রনাথ ব্রহ্মসঙ্গীত পরিবেশন করেন। তখন মন্দির নির্মাণের বরাদ্দ ছিল ১৫,০০০ টাকা। মন্দিরের গায়ে পূর্ব দিকে স্থাপিত হয়েছিল পঞ্চচূড়া— যার শীর্ষে তিনটি ছত্রে লেখা ছিল ‘ওঁ তৎ সত ঋতং সত্যং’। কালের ধর্ম গ্রাস করে বিস্মৃত করেছে সেই চূড়াকে, কিন্তু পুরনো দিনের ছবিতে তার স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে। তবে দীর্ঘ ১০ বছর রবীন্দ্র ব্রহ্ম উপাসনা গৃহের কাজে হাত লাগালো বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তবে কী কী কাজ হচ্ছে গৃহের, কোন কোন জায়গা গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মন্দিরের। কত টাকা অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে বা কোনও কোম্পানি কাজের দায়ভার দেওয়া হয়েছে সেই নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। অতীতে বিশ্বভারতীতে একাধিক ঐতিহ্যবাহী প্রাঙ্গণের সংস্কার হয়েছে কোনও কিছুর বদল না করেই। ২৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থেকে কাঁচ ঘর সংস্কারের কাজ শুরু হল।