‘পুবের কলম’ থেকে সম্প্রতি রেজিনগরের বিধায়ক রবিউল আলম-এর এক সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। তিনি বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর এখন কী ধরনের জনসেবা করতে চান ইত্যাদি নানা বিষয়ে এক আলাপচারিতায় অংশ নেন রবিউল আলম। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মিতা রায়
প্র: বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর রেজিনগরের মানুষের জন্য কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন?
উ এখানকার প্রধান সমস্যা যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিডিও অফিস– হাসপাতাল সবই গঙ্গার ওপারে। তাই গঙ্গাই একমাত্র ভরসা। এখানে যে স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে– সেখানে একজনই ডাক্তার। বেড নেই। বিল্ডিং ভেঙে পড়ছে। অসুবিধা হলেই বেলডাঙাতে আসতে হয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কিছু জায়গাও দখল হয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে চিঠি লিখেছি। যাতে রেজিনগরের ৬টা অঞ্চলের মানুষ ভালো স্বাস্থ্য পরিষেবা পান।
এর পাশাপাশি এই এলাকা আর্সেনিকপ্রবণ। কাপাসডাঙা– বেগুনবাড়িতে সমস্যা সবথেকে বেশি। পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্ট-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি আর্সেনিক মুক্ত পানীয়ের ব্যবস্থা করার জন্য। রির্জাভার তৈরি হয়েছে। পাইপলাইনও তৈরি হয়েছে। আশাকরি মাস ছয়েকের মধ্যেই আর্সেনিক মুক্ত পানী পাওয়া যাবে।
এছাড়া সুকুরপুকুর– শিবচন্দ্রপুর এই ২টি রাস্তা অত্যন্ত খারাপ। ইঞ্জিনিয়াররা রাস্তা ইতিমধ্যেই মাপজোপ করে গেছেন। আশা করি– রাস্তার সমস্যা খুব তাড়াতাড়ি মিটে যাবে। কাপাসডাঙা– বেগুনবাড়ির মধ্যে ১০০ মিটারের একটি সেতু তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, সরকার দ্রুত এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তাছাড়া রেজিনগর বিধানসভায় কোনও কলেজ নেই। পড়াশোনা করতে ছুটতে হয় বেলডাঙা, বহরমপুর, সালার, অথবা পলাশিতে। শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি, যাতে এখানে কলেজ প্রতিষ্ঠা করা যায়।
প্র: কংগ্রেসের গড়ে কংগ্রেসকেই হারানো কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
উ: পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১৪টি অঞ্চলেই জয় পেয়েছিলাম। লোকসভা নির্বাচনেও রেজিনগর বিধানসভাতে অপূর্ব সরকারকে ৩৬ হাজার লিড দিয়েছিলাম। গত বিধানসভা নির্বাচনে আমি ৭০ হাজার ভোটে জিতেছি। যা আশা করেছিলাম– তার থেকে মানুষ বেশি ভোট দিয়েছে। আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যেভাবে কাজ করছে, তাতে মানুষ এখন তৃণমূলকেই চায়। বিজেপির প্রতি মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে।
প্র: সামনেই জঙ্গিপুর-সামসেরগঞ্জে ভোট। জেতার ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?
উ: ১০০ শতাংশ আশাবাদী জেতার ব্যাপারে। জঙ্গিপুর, মুর্শিদাবাদ ও বহরমপুরে মানুষ তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছে।
প্র: তৃণমূলের এই বিরাট জয়ের কারণ কী?
উ: মানুষ একটা বিষয় খুব ভাল বুঝেছে। সেটা হল– বিজেপিকে রুখতে গেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতকে শক্ত করতে হবে। এলাকার অধিবাসীরা তাই দু’হাত তুলে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। তাছাড়া এই সরকার যেভাবে বার্ধক্যভাতা, বিধবাভাতা, স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা দিয়েছেন, তাতে গ্রামের মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। যা প্রতিফলন হয়েছে ভোটবাক্সে। মহিলারা চুটিয়ে দিদিকে ভোট দিয়েছেন। পুরুষদের থেকেও মহিলাদের ভোট দেওয়ার আগ্রহ চোখে পড়ার মতো। বাংলার মানুষের একটা ভয় ছিল, বিজেপি ক্ষমতায় এলে এনআরসি চালু করতে পারে। এই ব্যাপারেও মানুষ খুব সচেতন ছিল। যে কারণে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে।
প্র: মুর্শিদাবাদে একটা সময়ে ব্যাপক অভিযোগ ছিল গরু পাচার নিয়ে। এখন কী অবস্থা?
উ এখন পুরোটাই বন্ধ। উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, বিহারের গরু বাংলায় আসত। সেগুলিই সীমান্ত দিয়ে ওপার যেত। এখন আর তা হচ্ছে না।
প্রঃ রাজ্য সরকার ছোটো ও মাঝারি শিল্পের প্রসারে জোর দিয়েছে। এ ব্যাপারে বিধায়ক হিসাবে আপনি কোনও প্রস্তাব দিয়েছেন সরকারকে?
উঃ রেজিনগরে শিল্পতালুকের ১৯০ একর জমি আছে। ঘেরা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। পানীয়জল– রাস্তাঘাট সবই তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের পরিকাঠামো তৈরি করা গেলে এলাকার আরও উন্নতি হবে। সরকারের কাছে আমরা আগামীদিনে এই প্রস্তাব দেব।
প্র: ভাঙনের সমস্যা নিয়ে কী বলবেন?
উ: কামনগর, শক্তিপুর, রামনগর বাচলা, রামপাড়া-১– মির্জাপুরে ব্যাপক ভাঙন। কিছুদিন আগে মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন এসেছিলেন জেলায়। তাঁর সঙ্গে এনিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ভাঙনের ছবি তুলে মন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে। সেচ দফতরের সঙ্গেও কথা হয়েছে।
এক সময় মুর্শিদাবাদ ছিল দেশের অন্যতম দরিদ্র এলাকা। এখন অবস্থার উন্নতি হয়েছে। আমি আশা রাখি, মুর্শিদাবাদ শীঘ্রই কৃষি ও শিল্পে সমানভাবে এগিয়ে যাবে।