ইসলামাবাদ, ২০ জানুয়ারি: একে অপরের দেশে পালটা-পালটি হামলার পর ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার অবসান হল। এই দুই মুসলিম প্রতিবেশী দেশ আবারও নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। এখন থেকে দুই দেশই সম্মিলিতভাগে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার চেষ্টা করবে। ইরানের বিদেশমন্ত্রী আমির আব্দুল্লাহিয়ান ও পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী জলিল আব্বাস জিলানি সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ফোনে কথা বলেন। সেখানে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী বলেন, ‘ভ্রাতৃপ্রতিম ইরানের নিরাপত্তাকে নিজের নিরাপত্তা বলে মনে করে পাকিস্তান। ইসলামাবাদ চায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপগুলো আরও বেশি সমন্বয়ের ভিত্তিতে নিজ নিজ দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমেই সম্পন্ন হোক।’ পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী আনেয়ারুল হক কাকারও দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার অবসান ঘোষণা করেছেন। ইতিমধ্যে দুই দেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতরা নিজ নিজ কূটনৈতিক মিশনে ফিরে গিয়েছেন। কাকার বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের আগে ইরান ও পাকিস্তানের সম্পর্ক যেখানে ছিল ঠিক সেখানে ফিরে যাওয়া দু’দেশের স্বার্থের জন্যই জরুরি। এক্ষেত্রে ইরানের পক্ষ থেকে গৃহীত প্রতিটি ইতিবাচক পদক্ষেপকে স্বাগত জানাবে পাকিস্তান। পাক প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিশ্বের সকল দেশের সাথে, বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্কে বিশ্বাসী ইসলামবাদ।’ এর আগে মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী বালুচিস্তান প্রদেশে জঙ্গি গোষ্ঠী জয়শ উল আদলের ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী। এ ঘটনার পর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে ফাটল ধরে। বৃহস্পতিবার ইরানের সিস্তান ও বালুচিস্তান প্রদেশের কয়েকটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসলামাবাদ। এরপর উভয় দেশকে সংযত হয়ে পরিস্থিতি সমাধানের আহবান জানায় চিন ও তুরস্ক। এরই ধারাবাহিকতায় পাক বিদেশমন্ত্রী জলিল আব্বাস জিলানি ও ইরানের বিদেশমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানের মধ্যে ফোনালাপ হয় দু’দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়। উল্লেখ্য, পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে ৯০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। দুই দেশেরই রয়েছে বড় বড় শত্রু। একইসঙ্গে মুসলিম দেশ হওয়ার কারণেও দুই দেশ পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের পক্ষ থেকে নানা ষড়যন্ত্রের সম্মুখীন। দুই দেশই এই বাস্তবতা ভালো করে জানে এবং এর আলোকে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারের প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের উত্তেজনাও দ্রুত মিটিয়ে ফেলা সম্ভব হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যারা সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছে এবং সন্ত্রাসীদের পেছনে যারা কলকাঠি নাড়ছে তারা আসলে সাম্রাজ্যবাদীদের হয়ে কাজ করছে। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক ইরান এসবকিছু ভালো মতোই জানে।