পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: গাজাকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্য এখন উত্তপ্ত। ক্রমশ সংঘাত ছড়িয়ে পড়ছে আশেপাশের দেশগুলিতেও। ইরান ও ইয়েমেন ফ্রন্টফুটে এসে লড়াই করার বার্তা দিচ্ছে। আমেরিকা-ব্রিটেনসহ ইসরাইলের দোসরদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে হামাস, হিজবুল্লাহ, ইরাকের প্রতিরোধ বাহিনী। গাজায় প্রায় ২৫ হাজার নরহত্যার পরও থামছে না ইসরাইল। তাই নানা ফ্রন্টে প্রতিরোধ ও আক্রমণ শুরু হয়েছে। ফলে এই যুদ্ধ আগামীতে আরও ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার ভোররাতে ইরান হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইরাকে অবস্থিত মোসাদের সদর দফতর। অন্যদিকে, গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার প্রতিবাদে লোহিত সাগরে আগে থেকেই অবরোধ শুরু করেছিল ইয়েমেনের আনসারুল্লাহরা। হুমকি দিয়েছিল, ইসরাইল-সংশ্লিষ্ট কোনও জাহাজ তারা লোহিত সাগর দিয়ে চলাচল করতে দেবে না। কার্যত সেটাই করছিল তারা। একের পর এক জাহাজে হামলা চালাচ্ছিল আনসারুল্লাহরা (হুতি)। লোহিত সাগরের ত্রাস হয়ে উঠেছিল ইয়েমেন। এর ফলে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি হওয়ায় মাঠে নামতে বাধ্য হয় পশ্চিমারা। আমেরিকা ও ব্রিটেন হামলা চালায় ইয়েমেনের রাজধানী সানা-সহ বহু এলাকায়। এরপর তারা ভেবেছিল, এবার হয়তো আনসারুল্লাহরা চুপ হয়ে যাবে ভয়ে। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, হুতিরা সংযত না হলে আবারও আক্রমণ হবে তাদের ঘাঁটিগুলিতে। কিন্তু কার্যত তা হয়নি। অকুতোভয় আনসারুল্লাহ বাহিনী ফের হামলা চালিয়েছে আমেরিকার জাহাজে। গাজার ভাইবোনদের জন্য নিজেদের জীবন বিপন্ন করতে কোনও ভয় কাজ করছে না তাদের মধ্যে। মার্কিন কার্গো জাহাজে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা করেছে ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলন সমর্থিত সামরিক বাহিনী। লোহিত সাগরের ইয়েমেন উপকূলের কাছে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এভাবে গাজা-ইসরাইল যুদ্ধ নিয়ে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে লোহিত সাগর এলাকা ভীষণভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ব্রিটেন-আমেরিকা-ইসরাইলের চোখে চোখ রেখে লড়ছে আনসারুল্লাহরা।
এদিকে, গাজায় ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞ জারি ছিল মঙ্গলবারও। রাফায় হানাদারি হামলায় একই পরিবারের ১২ সদস্য নিহত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১৫৮ জনের। মোট নিহতের সংখ্যা ২৪ হাজার পার হয়েছে। খান ইউনিসে ৭ বছর বয়সি এক বালককে মিসাইল হামলায় নিশানা করেছে ইসরাইল। সাইকেল নিয়ে খেলছিল সে। খেলতে খেলতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে বাচ্চাটি। বাচ্চাটির লাশ নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার পিতা—আমাকে ক্ষমা করো বাছা। আমি তোমাকে রক্ষা করতে পারলাম না! গাজায় এই নৃশংস হামলা বন্ধ না হলে আনসারুল্লাহরা হামলা বন্ধ করবে না বলে জানিয়েছে।
মার্কিন কেন্দ্রীয় মিলিটারি কমান্ড স্থানীয় সময় সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, লোহিত সাগরে ‘জিব্রাল্টার ঈগল’ নামে আমেরিকার মালিকানাধীন একটি বাল্ক কার্গো জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র হয়েছে। ইয়েমেনের সামরিক বাহিনীও এক বিবৃতিতে হামলার কথা নিশ্চিত করেছে। তারা বলেছে, জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে এবং ক্ষেপণাস্ত্রটি সরাসরি জাহাজে আঘাত করে। এর ফলে জাহাজে আগুন ধরে যায়। ভালোই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে হুতিরা মনে করছে। তারা জানিয়েছে, আমাদের উপর আক্রমণ চালিয়ে আমেরিকা-ব্রিটেন বাহিনী আমাদের কাবু করতে পারবে না। বাব এল মান্দেব প্রণালী দিয়ে এই বাহিনীর কাউকে প্রবেশ করতে দেব না আমরা। এভাবেই রীতিমতো হুমকি দিয়ে চলেছে ইয়েমেন। আমেরিকা-ব্রিটেনের বিরুদ্ধে ইয়েমেনের মতো একটি রাষ্ট্রের এমন দুঃসাহস দেখে অবাক হচ্ছে বিশ্ববাসী। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনেই গাজাবাসীর জন্য ইয়েমেনের এই দৃঢ় মনোভাবের প্রশংসা করেছেন। প্রসঙ্গত, সোমবার সকালে ইয়েমেন উপকূলের দক্ষিণে অবস্থানরত জাহাজটির উপর এই হামলা চালানোর পর এদিন ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতির সামরিক শাখার মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি হুমকি দিয়েছেন, ইয়েমেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসনে অংশ নেওয়া আমেরিকা ও ব্রিটেনের সব জাহাজ ও যুদ্ধজাহাজকে টার্গেট করা হবে। মার্কিন-মালিকানাধীন জাহাজটিতে ইস্পাত পণ্য পরিবহণ করা হচ্ছিল। সেটিতে জাহাজবিধ্বংসী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। মিসাইলের আঘাতে জিব্রাল্টার ঈগল নামের ওই জাহাজে আগুন ধরে যায়। আক্রান্ত হওয়ার পরেও জাহাজটি গন্তব্যের পথে রয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে।
ইয়েমেনের হামলার কারণে এশিয়া থেকে ইউরোপে পণ্য পরিবহণের সবচেয়ে ছোট পথ লোহিত সাগর দিয়ে সুয়েজ খাল হয়ে ভূমধ্যসাগরে যাওয়ার রুট এড়িয়ে চলছে অনেক পণ্য পরিবহণকারী জাহাজ। বহু জাহাজ এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা উপকূলের কেপ অব গুড হোপ হয়ে ইউরোপে যেতে বাধ্য হচ্ছে।