পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বর্বর হামলার ১০০ দিন পার হয়ে গেল। আর রাষ্ট্রসংঘ জানাল এই ঘটনা ‘মানবতার কলঙ্ক’। অপরদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যুদ্ধের ১০০ দিন পার হওয়া নিয়ে তাদের দেশে সকাল থেকে নানা অনুষ্ঠান করে চলেছেন। হুমকি দিচ্ছেন নেদারল্যান্ডের হেগে আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতকে তারা কোনও পরোয়া করে না। ফিলিস্তিনের উপর তাদের আক্রমণ জারি থাকবে। মনে হয় ১০০ দিন পূর্তি হিসেবে গুনে গুনে ১০০ জনকে হত্যা করা হয়েছে শনিবার। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ফিলিস্তিনের মানুষদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বিশাল বিশাল মিছিল বের হয়েছে ১০০ দিন উপলক্ষে। ১০০ দিনের এই অসম লড়াইয়ে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৪ হাজার ফিলিস্তিনির আর আহত হয়েছেন ৬০ হাজার। আর ১০০ দিনে ১ লক্ষেরও বেশি মানুষের খুন ঝরল ফিলিস্তিনের পবিত্র জমিনে। এর মধ্যে রয়েছে পঙ্গু হয়ে পড়া মানুষও। নিখোঁজ রয়েছে ৮ হাজারের বেশি। রাষ্ট্রসংঘের প্যালেস্টাইন রিফিউজি এজেন্সির প্রধান ফিলিপ লাজারিনি আজ আক্ষেপ করে বলেন, গণহত্যা, বিধ্বংস, বিতাড়ন, ক্ষুধা, ক্ষয় আর দুঃখে ভরা এই ১০০ দিন আমাদের মানবিক মূল্যবোধের উপর বড় ধরনের কলঙ্কের ছাপ রেখে গেল। শিশুরা আতঙ্কিত। মানুষ দুর্ভিক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে। এখনও যুদ্ধ বন্ধ করা গেল না।
৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণে ইসরাইলে ১২০০ জনের মৃত্যুর পর সর্বশক্তি নিয়ে ফিলিস্তিনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসরাইলি সেনা আর তাদের মদদ করতে এগিয়ে আসে আমেরিকা। মাঝখানে কয়েকদিনের যুদ্ধবিরতির পর পুনরায় একতরফাভাবে নিরীহ মানুষদের উপর বোমা বর্ষণ করে চলেছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনের কাছে কোনও বিমান নেই, যুদ্ধ ট্যাঙ্ক নেই, সাঁজোয়া গাড়ি নেই আর পালানোর কোনও জায়গা নেই। ফলে ১০০ দিন ধরে খুন ঝরছে ফিলিস্তিনে। যেখানে যখন মন করছে সেখানে বোমা ফেলে আসছে ইসরাইলি যুদ্ধবিমান। ফিলিস্তিনের ৮৫ শতাংশ মানুষ গৃহহারা, ত্রাণ সামগ্রীর ট্রাকও আটকে দিয়েছে ইসরাইল। রাষ্ট্রসংঘে একাধিকবার প্রস্তাব উঠেছে কিন্তু বেশিরভাগ প্রস্তাবে ইসরাইলকে বাঁচাতে ভেটো দিয়েছে আমেরিকা। রাষ্ট্রসংঘ, নিরাপত্তা পরিষদ, ইউনিসেফ, ইউনেসকো কারও প্রস্তাবকে গুরুত্ব দিতে রাজি নয় ইসরাইল। গাজার উপর প্রথম আক্রমণ শুরু হলেও ওয়েস্ট ব্যাংকে হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। লেবাননে, সিরিয়াতেও বোমা ফেলে এসেছে। হামলায় নিহতদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী।
একদিকে সিরাইল হুমকি দিচ্ছে, কেউ আমাদের থামাতে পারবে না। হেগের আদালতও নয়। অপরদিকে হামাস সাধ্যমতো আক্রমণ করছে জমিনে সেনা ও ট্যাঙ্কের উপর। হামাসের বেশ কয়েকজন নেতা নিহত হলেও ইসরাইল যুদ্ধবন্দিদের উদ্ধার করতে এখনও ব্যর্থ। আর সেজন্য ১০০ দিন পার হতেই বন্দিদের পরিবার তেল আবিভে বিক্ষোভ দেখাল রবিবার। ইসরাইলের সেনা ক্ষয় ও আর্থিক দুরবস্থা বাড়ছে দেখে বিরোধীরা চাপ দিচ্ছে নেতানিয়াহুকে। ফিলিস্তিনের প্রতিবেশি দেশগুলো ত্রাণ সামগ্রী পাঠিয়ে ও নিন্দা জানিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। আরব আমিরশাহী এখনও ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইছে না। আরব লীগ ওআইসি রাবেতা জিসিসি সব কয়টি সংস্থা চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে ফিলিস্তিনের উপর বর্বর আক্রমণ বন্ধ করতে। ফিলিস্তিনে হত্যা করা হয়েছে এ পর্যন্ত ১১০ জন সাংবাদিককে। ৩৮০টি মসজিদ ভেঙে চুরমার করা হয়েছে। ৩৭টি হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে মাটিতে মিশমার। ৭০ শতাংশ বসত বাড়ি বোমায় বিধ্বস্ত। আশ্রয় শিবিরেও বোমা পড়ছে। স্কুল নেই, হাসপাতাল নেই, রাষ্ট্রসংঘের অফিস ও স্থাপনা বিধ্বস্ত। তাঁবু খাটিয়ে প্রাণ বাঁচাচ্ছেন এখানকার মানুষ। দুর্ভিক্ষের দ্বার প্রান্তে দাঁড়িয়ে মজলুম ফিলিস্তিনিরা। তাদের প্রতি সমবেদনা জানাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ পথে নেমে এসেছে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে।