আহমদ আবদুল্লাহ: ইসলামিয়া হাসপাতাল প্রায় ১০০ বছর হতে চলল। ৭৩ চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউতে অবস্থিত পুরনো হাসপাতালটি ভেঙে এখন ১০তলা বিশিষ্ট হাসপাতাল করা হয়েছে। শুরু করেছিলেন মরহুম জনাব সুলতান আহমেদ। কিন্তু তখন নির্মাণ কাজ ছিল খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে। তাঁর ইন্তেকালের পর দায়িত্ব আসে মন্ত্রী ও মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং জনাব আমিরউদ্দীন ববির হাতে। তাঁরা যথাক্রমে প্রেসিডেন্ট এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। এরপরই বহু সমস্যা ও পর্যায় পেরিয়ে এখন ইসলামিয়া হাসপাতাল কলকাতার অন্যতম ঝাঁ-চকচকে হাসপাতাল হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। ১০তলার এই হাসপাতালে রয়েছে ক্যাথ ল্যাব থেকে শুরু করে আধুনিক সব চিকিৎসার সরঞ্জাম। রয়েছেন বিশিষ্ট চিকিৎসকরাও।
কিন্তু ইসলামিয়া হাসপাতাল শুধু কলকাতা কেন্দ্রিক না থেকে বাংলার বিভিন্ন জেলার গ্রামে পৌঁছাতে চায়। আমিরউদ্দীন ববি জানালেন, এ জন্য তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে দুয়ারে সরকার প্রকল্প নিয়ে প্রত্যন্ত এলাকা ও মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাচ্ছেন ঠিক তেমনি ইসলামিয়া হাসপাতাল এবার সেবা প্রদান করার লক্ষ্যে চিকিৎসা ও চিকিৎসক নিয়ে মানুষের দুয়ারে পৌঁছাতে শুরু করেছে। অর্থাৎ রোগীরা হাসপাতালে আসার আগেই চিকিৎসক দল জেলাগুলির বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে রোগীদের ঘরের কাছেই তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ওষুধ প্রদান এবং প্রয়োজন বুঝলে রোগীদের বাসে করে হাসপাতালে নিয়ে এসে বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি করছে।
আমিরউদ্দীন ববি হেসে এই প্রতিবেদককে বললেন, আপনারা বলতে পারেন এখন আমাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে ‘দুয়ারে ইসলামিয়া’ প্রকল্প নিয়ে অসুস্থ মানুষের দোরগোড়ায় হাজির হওয়া। কলকাতার খুব কম হাসপাতালই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত গ্রাম বা মহল্লাবাসীদের পরম যত্নে হাসপাতালে নিয়ে আসছে। এখানে তাদের বেড দিয়ে যথাযথ চিকিৎসা চলছে। বলতে পারেন, এই কাজ হচ্ছে প্রায় বিনা পয়সায়। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলে খুবই ভালো। ইসলামিয়া হাসপাতালের জেনারেল সেক্রেটারি আরও জানালেন, আমরা আগামীতে বিভিন্ন জেলায় ‘দুয়ারে ইসলামিয়া’ ক্যাম্পের আয়োজন করার পরিকল্পনা নিয়েছি। ইসলামিয়া হাসপাতালে এখন সিসিইউ, আইসিইউ, ৮টি অপারেশন থিয়েটার, ক্যাথ ল্যাব এবং অত্যাধুনিক সব সরঞ্জাম রয়েছে।
এই প্রতিবেদক আমিরউদ্দীন ববির সঙ্গে বিভিন্ন ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন। দেখা গেল ক্যাম্প থেকে যারা এসেছেন তাঁরা বেডে শুয়ে আছেন। একজন-দু’জনের অক্সিজেন ও স্যালাইন চলছে। রোগীদের জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা কেমন আছেন? তাঁরা বললেন, আগের থেকে অনেক ভালো। আমতলা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে আশরাফ মণ্ডল ও মুনিরা বেগমকে। তাঁরা দু’জনেই বললেন, ইসলামিয়া হাসপাতাল আমাদের এলাকায় গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে এখানে না নিয়ে এলে আমাদের চিকিৎসাই হত না। ডাক্তারবাবুরা বলছেন, আমরা আর দিনকয়েকের মধ্যে হয়তো সুস্থ হয়ে যাব। আল্লাহ এদের ভালো করুন। কোনও অসুবিধা হচ্ছে কী না জানতে চাইলে ১০-১২ জন রোগীর প্রত্যেকেই বললেন, না বাবা হাসপাতাল থেকে আমাদের খাবার দাবার থেকে শুরু করে ওষুধপত্র সবকিছু দেওয়া হচ্ছে। নার্সরাও যত্ন নিচ্ছেন। আমরা খুব খুশি। এভাবে যে চিকিৎসা হবে তা কোনওদিন ভাবতেই পারিনি।
আমিরউদ্দীন ববি বললেন, আমাদের এই ‘দুয়ারে ইসলামিয়া’ প্রকল্প সবারই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আমরা আশা করব, ইসলামিয়া হাসপাতাল আরও ভালোভাবে মানুষের সেবা করতে পারবে। আমাদের প্রেসিডেন্ট ফিরহাদ হাকিমও চান দরিদ্র মানুষরাও খুব কম খরচে এখানে চিকিৎসা করিয়ে যেন সুস্থ হয়ে বাড়ি যেতে পারেন।