বিশেষ প্রতিবেদন: প্লাস্টিকের বোতলে জল পান করেন? এই প্লাস্টিকের বোতল কি সত্যিই আপনার জন্য নিরাপদ? সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, একটি সাধারণ এক লিটারের জলের বোতলে গড়ে প্রায় ২ লক্ষ ৪০ হাজার প্লাস্টিকের গুঁড়ো থাকে। যদিও এই গুঁড়োগুলির মধ্যে অনেকগুলোই শনাক্ত করা যায়নি। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, প্লাস্টিকের বোতলে রাশি রাশি প্লাস্টিকের গুঁড়ো জলের সঙ্গে মিশে থাকে। চুলের থেকেও সেই সূক্ষ্ণ কণাগুলি শরীরে ঢুকছে। গুঁড়ো প্লাস্টিক জল খাওয়ার সময় শরীরে ঢোকে যা শরীরে টক্সিনের মাত্রা বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।
গবেষণা বলছেন, ১ লিটার প্লাস্টিকের বোতলের জলে (৩৩ আউন্স) কম করেও ২ লাখ ৪০ হাজার প্লাস্টিকের কণা মিশে থাকে। খালি চোখে এদের দেখা যায় না। জলের সঙ্গে শরীরে ঢুকে রক্তের সঙ্গে মিশে যায়।
ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস জার্নালে সোমবার ৮ জানুয়ারি প্রকাশিত এক গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, ১ লিটারের জলের বোতলে প্রচুর পরিমাণে ন্যানোপ্লাস্টিক থাকে, যার দৈর্ঘ্য ১ মাইক্রোমিটারের কম। যা ধারণার থেকেও ১০০ গুণ বেশি। গবেষকরা বেশ কিছুদিন ধরেই বোতলজাত জলে ন্যানোপ্লাস্টিক থাকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে আসছিলেন।
বিশেষজ্ঞদের ন্যানোপ্লাস্টিকগুলো মাইক্রোপ্লাস্টিকের থেকেও মানব স্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় ঝুঁকির কারণ। এগুলো মানুষের কোষের ভিতরে এবং রক্তে প্রবেশ করতে পারে। ন্যানোপ্লাস্টিক প্লাসেন্টার মাধ্যমে গর্ভে থাকা শিশুদের শরীরেও প্রবেশ করতে পারে। জলে থাকা ন্যানো পার্টিকেল শনাক্তকরণে প্রযুক্তিগত বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
এই বিষয়গুলি জানতে গবেষকরা একটি নতুন মাইক্রোস্কোপি কৌশল তৈরি এবং একটি ডেটা-চালিত অ্যালগরিদম প্রোগ্রাম ব্যবহার করেছেন। বিজ্ঞানীরা গবেষণার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড থেকে কেনা প্রায় ২৫১ লিটার জলের বোতল বিশ্লেষণ করতে এগুলো ব্যবহার করেছেন। তারা প্রতি লিটারে ১ লক্ষ ১০ হাজার থেকে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের কণা খুঁজে পেয়েছেন, যার মধ্যে পায় ৯০ শতাংশই ন্যানোপ্লাস্টিক।
যে কোনও রকমের প্লাস্টিকের ভগ্নাংশ, যা লম্বায় ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট, তাকেই বলা হয় মাইক্রোপ্লাস্টিক। এর আগে মানুষের কোষে, গবেষণাগারের জীবজন্তুদের মধ্যে, এবং সামুদ্রিক প্রাণীদের শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছিল। কিন্তু জীবিত মানুষের উপর এই দূষকের ভূমিকা এখনও পর্যন্ত অজানাই ছিল। কিন্তু সম্প্রতি স্তনদুগ্ধে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি খুঁজে পাওয়ার পর তার ক্ষতিকর প্রভাবের বিষয়টি তুলে ধরেছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষণার প্রধান লেখক এবং কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাইক্সিন কিয়ান বলেছেন, গবেষণাটি ন্যানোপ্লাস্টিক বিশ্লেষণের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য খুবই সহায়ক হবে। যা ন্যানো স্তরে প্লাস্টিক দূষণের বর্তমান জ্ঞানের যে ব্যবধান তা অনেকটাই পূরণ করবে। এর আগে বিষয়টি একদমই অজানা ছিল। তবে গবেষকরা জানিয়েছেন, তাদের গবেষণা এখনও বাকি আছে। তারা পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকা থেকে জল ও বরফ সংগ্রহ করে ন্যানোপ্লাস্টিকের সন্ধান করবে।