পারিজাত মোল্লা: শনিবার কলকাতার সিটি সেশন কোর্টের ইডি এজলাসে পেশ করা হয়েছিল বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্যকে।এদিন আদালতে বিস্ফোরক অভিযোগ আনলো কেন্দ্রীয় আর্থিক তদন্তকারী সংস্থা ইডি। প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে ‘লেনদেন’ করেছেন গ্রেফতার হওয়া বনগাঁর তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য। এদিন আদালতে জানাল ইডি।
ইডির দাবি, – ‘১৯ টি মুদ্রা কেনাবেচার সংস্থার মাধ্যমে এই টাকা লেনদেন করা হয়েছে। বিভিন্ন বিদেশি অ্যাকাউন্টে ডলার আকারে গিয়েছে এই বিপুল পরিমাণ টাকা’।শঙ্করের এক পরিচিতের কাছ থেকে সে কথা জানা গিয়েছে বলে দাবি ইডির।শনিবার শঙ্করকে আদালতে হাজির করিয়েছে ইডি। সেখানেই তারা দাবি করেছে, শঙ্করের মাধ্যমে বিদেশে পাঠানো প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার প্রায় ১০ হাজার টাকা রেশন ‘দুর্নীতি’কাণ্ডে ধৃত মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালুর। এই টাকা প্রথমে ফরেক্স সংস্থার মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রায় (মূলত ডলার) পরিবর্তন করা হয়েছে।
ইডি এ-ও জানিয়েছে, টাকা গিয়েছে দুবাইতে। হয় সরাসরি, নয়তো বাংলাদেশ হয়ে ওই টাকা দুবাইতে পাঠানো হয়েছে।ইডির দাবি, গত ১০ বছর ধরে এই ‘দুর্নীতি’ চলছে। সে কথা শুনে বিচারক বিস্ময় প্রকাশ করেন। বলেন, ”এত টাকার লেনদেন, আর বলা হচ্ছে এটা নাকি গরিব রাজ্য!” নগর ও দায়রা আদালতে ইডির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শঙ্করের আইনজীবী জানান, -‘ তাঁর মক্কেল ফরেক্স বা বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচার বৈধ ব্যবসা করেন। এই ব্যবসা বেআইনি নয়। যথাযথ নিয়ম মেনেই কাজ করা হয়’।ধৃত শঙ্করকে ১৪ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে চেয়েছে ইডি।
ইডি জানায়, -‘ হাসপাতালে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়ের সঙ্গে চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ রেখেছিলেন শঙ্কর। সেই চিঠি ইডি হাতে পেয়েছে। সেখানে একাধিক নামের উল্লেখও রয়েছে। ইডির দাবি, জ্যোতিপ্রিয় এবং তাঁর কন্যার মধ্যে এই চিঠি লেনদেন হয়।তার মধ্যে ২৭০০ কোটি টাকা পাচার হয়েছিল দুবাইয়ে।
ইডির তরফে আরও দাবি করা হয়, -‘শঙ্কর আঢ্যর সংস্থার মাধ্যমেই টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে’।ইডির আইনজীবী এদিন নগর দায়রা আদালতে বলেন, গ্রেফতার হওয়া শঙ্কর আঢ্য এর অনেক এজেন্সি আছে। সেই এজেন্সিগুলির মাধ্যমেই বৈদেশিক মুদ্রার এক্সচেঞ্জ করা হয়। ইডি জানায়, বাংলায় এমন মোট ১৯টি বৈদেশিক মুদ্রার এক্সচেঞ্জের ব্যবসা রয়েছে অভিযুক্তর। যার মধ্যে সবগুলিই সীমান্তবর্তী এলাকাতেই বলে দাবি ইডির।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আরও চাঞ্চল্যকর দাবি হল, এগুলির মাধ্যমে মোট ২০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি রেশনে বলে সন্দেহ ইডির। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে এদিন আদালতে যে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির হিসেব দেখানো হয়, তা শুনে অবাক বিচারকও। তিনি বলেন, ‘এটার পর কি বলা যায় এই রাজ্য গরিব!’