পুবের কলম প্রতিবেদক: এবার ৯০ শতাংশের বেশি অস্থায়ী পাট শ্রমিকদের স্থায়ী করার ঘোষণা করলেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। বৃহস্পতিবার নবমহাকরণে সাংবাদিক বৈঠক করে মলয় ঘটক বলেন, এতদিন শুধু শ্রমিক উন্নয়নের গল্প শুনিয়ে এসেছে বামেরা, কিন্তু আসল উন্নয়ন করে দেখাল মা-মাটি-মানুষের সরকার। তিনি আরও বলেন, চটকল শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এবার একটি সঠিক জায়গা পেল। ঠিক হয়েছে এবার নতুন যে শ্রমিক কাজে যোগ দিচ্ছেন তাঁর বেতন হবে ১৪,০৬৬ টাকা। যা আগের থেকে ৩৫৬২ টাকা বেশি। এটি পাট শ্রমিকদের কাছে অভাবনীয় বিষয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে চটকল শ্রমিকদের জন্য নেওয়া হয়েছে এই ঐতিহাসিক চুক্তি। তাঁদের সমস্ত দাবিকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে এই চুক্তিতে।
শ্রমমন্ত্রী আরও বলেন, বেতনবৃদ্ধির পাশাপাশি আরও একটি উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১৫ বছর যে শ্রমিক কাজ করবেন তাঁর স্পেশাল বদলি এবং পরে স্থায়ীকরণ এবং ২০ বছর যিনি কাজ করছেন তাঁর চাকরি স্থায়ী করা হবে। শুধু তাই নয়, গৌরীপুর এবং নিউ সেন্ট্রাল জুটমিল খোলারও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত অল বেঙ্গল তৃণমূল জুট অ্যান্ড টেক্সস্টাইল ইউনিয়নের ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম, এডিএল লেবার কমিশনার তীর্থঙ্কর সেনগুপ্ত। চটকলের সমস্যা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এদিন কেন্দ্রের প্রতি তীব্র ক্ষোভ উগরে দেন আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, কেন্দ্র জুটকে অগ্রাধিকার না দিয়ে সিন্থেটিক দ্রব্যকে তুলে ধরছে। এর ফলেই সমস্যা হচ্ছে। তবে সমস্ত চক্রান্তের যোগ্য জবাব দিল রাজ্যের এই ঐতিহাসিক চুক্তি।
অল বেঙ্গল তৃণমূল জুট অ্যান্ড টেক্সস্টাইল ইউনিয়নের ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম জানান, রাজ্য সরকার শ্রমিকদের জন্য কী কী করল এই সব বোঝাতে চলতি মাস জুড়ে উত্তর থেকে দক্ষিণের প্রতিটি চটকল এলাকায় হবে গেট মিটিং। এছাড়াও ফেব্রুয়ারি ১০ তারিখের মধ্যে বারাকপুরে হবে এক বিশাল জমায়েত, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিযেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানাতে উপস্থিত থাকবেন রাজ্যের সমস্ত চটকল শ্রমিকরা।
প্রসঙ্গত, বুধবারই শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের নেতৃত্বে আয়োজিত ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে জুট শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জুট মিলের ব্যবসার ইতিহাসে এমন সিদ্ধান্ত এর আগে কোনও রাজ্যের সরকার নেয়নি। লোকসভা নির্বাচনের আগে আড়াই লক্ষ জুট মিল কর্মীর বেতন মান বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজ্য সরকার জুট মিল মালিক সংগঠন আইজেএমএ, জুট মিল শ্রমিক সঙ্গঠনের সঙ্গে যুক্ত প্রতিনিধি এবং ২৩টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে। কয়েক ঘন্টা ধরে চলা বৈঠক শেষে শ্রম বিভাগের মধ্যস্থতায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই বৈঠকের আগে ৯ বার ত্রিপাক্ষিক এবং একাধিক দফায় দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। তবে, বুধবার ও বৃহস্পতিবারে বেতন মান বৃদ্ধি এবং অস্থায়ী জুট শ্রমিকদের স্থায়ী করার সিদ্ধান্তের পর জুটের ব্যবসা নতুন প্রাণবায়ু পেয়েছে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।