পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে হস্তক্ষেপ চেয়ে রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসকে চিঠি পাঠিয়েছে বিএনপি। রবিবার রাতে দলটির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য জানান। চিঠিতে বিএনপি জানিয়েছে, বর্তমান সরকারের অধীনে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের দুটি বিতর্কিত নির্বাচনের পটভূমিতে আবারও আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে একটি প্রহসনমূলক ও সহিংস কারচুপির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
তথাকথিত এই ‘ডামি নির্বাচন’ সামনে রেখে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যে নাশকতা চলছে, তাতে শুধু গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাই নন, নিপীড়ন-নিষ্পেষণের শিকার হচ্ছেন খেটে খাওয়া প্রান্তিক মানুষও। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান-কাঠামোতে, বিশেষত বাস-ট্রেনে পরিকল্পিত হামলার মাধ্যমে জনগণের জানমাল ও নিরাপত্তা-স্বাধীনতা বিনষ্ট করছে আওয়ামি লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাংশ।
সহিংসতার বিষয়টি উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, চলমান অগ্নিসংযোগের প্রতিটি ঘটনায় একটি সুনির্দিষ্ট প্যাটার্ন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যার একমাত্র বেনিফিশিয়ারি আওয়ামি লীগ ও তার অধীনস্থ রাষ্ট্রযন্ত্র। আর এর প্রধান ভুক্তভোগী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। ক্ষমতাসীন শীর্ষ নেতৃত্ব ও পুলিশের কর্মকর্তারা কোনও তদন্ত, তথ্য বা সূত্র যাচাই ছাড়াই প্রতিটি ঘটনার দায় বিএনপির ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন।
গত ১৯ ডিসেম্বর ট্রেনে মর্মান্তিক ঘটনার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রসংঘে পাঠানো এই চিঠিতে বলা হয়, ঢাকায় চলন্ত ট্রেনের তিনটি বগিতে অগ্নিসংযোগ করা হয় ও এতে চার যাত্রী মারা যান। ঘটনার বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয়, রাষ্ট্রযন্ত্রের একটি চিহ্নিত অংশের যোগসাজশেই এই নাশকতা সংঘটিত হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, ‘বিগত বছরগুলোতে বিএনপি যতবার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, আওয়ামী লীগও একই দিনে পরিকল্পিত নাশকতার উদ্দেশে কর্মসূচি আহ্বান করেছে।
আমরা দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বদা একটি অহিংস আন্দোলন বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছি এবং সব উসকানি এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছি। গত ২৮ অক্টোবর আমরা ঢাকায় একটি মহাসমাবেশের আয়োজন করেছিলাম, যেখানে সারাদেশ থেকে গণতন্ত্রকামী লাখ লাখ মানুষ যোগ দিয়েছিলেন। নানা প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আবারও প্রমাণ করেছিল, বিএনপির পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে এবং একটি সত্যিকারের নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের বিব্রতকর পরাজয় অনিবার্য।
আর তাই আমাদের মহাসমাবেশকে বানচাল ও চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সেদিন একটি ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে শেখ হাসিনার আজ্ঞাবহ পুলিশ।’ ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, মুখোশধারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পুলিশের সহায়তায় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালায় এবং পুলিশ হাসপাতালের সামনে বাস ও গাড়িতে আগুন দেয়। তারা প্রকাশ্য দিবালোকে একজন পুলিশ সদস্যকে হত্যাও করে, কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে পুলিশের কেউ তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেনি, যা ভিডিয়োতে স্পষ্ট দেখা যায়।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধারে বিএনপির আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্যই বানোয়াট অভিযোগ করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগের যৌথ এ উদ্যোগ আসলে সরকারের মাস্টার প্ল্যানেরই অংশ। এটি আজ দৃশ্যমান যে, সরকার একটি সিস্টেম্যাটিক ফর্মুলা অনুসরণ করছে।’