মুহাম্মদ ফিরোজ, ডায়মন্ডহারবার: অবিরাম বৃষ্টিতে জলমগ্ন সাগর, পাথরপ্রতিমা, কাকদ্বীপ, নামখানা, বকখালি, ফ্রেজারগঞ্জ সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। কোথাও কোথাও স্লুইসগেট খুলে জল বের করে দেওয়া হয়। পূর্ণিমার কোটালে জোয়ারের জল নদীর কানায় কানায় পৌঁছে যায়। ঘোড়ামারা, মৌসুনি দ্বীপে সাধারণ মানুষের মধ্যে ফের নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। যদিও কোথাও বাঁধ ভাঙার খবর নেই। বৃষ্টির জমা জলে চাষের জমি ডুবে রয়েছে প্রায় সমস্ত এলাকাতেই। পানবরজগুলিতেও বৃষ্টির জল জমে রয়েছে। রবিবার রাতে একনাগাড়ে বৃষ্টি চলে জেলার প্রায় সর্বত্রই।
সোমবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ে বৃষ্টি। ডায়মন্ডহারবার, বজবজ, মহেশতলা, পূজালি পুর এলাকাগুলির বিভিন্ন ওয়ার্ড বৃষ্টির জলে জলমগ্ন। এদিকে গঙ্গাসাগরে কপিলমুনির মন্দির সংলগ্ন এলাকায় সোমবার সকালে টর্নেডো হয়। এদিন সকাল দশটা নাগাদ মিনিট দেড়েকের এই ঝড় স্থলভূমিতে রীতিমতো তাণ্ডব চালায়। টর্নেডোর প্রভাবে সৈকতের ধারেই সাগরমেলা মাঠে সাগর পঞ্চায়েত সমিতির কটেজের দশটি নীল টিনের ঘর ও পাশের দশটি অ্যাসবেস্টরের ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে বহু দূরে নিয়ে গিয়ে ফেলে টিন ও অ্যাসবেস্টরগুলি। লোহার পাইপগুলি দুমড়ে মুচড়ে দেয়। গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষ্যে জিনিসপত্র রাখার একটি গোডাউন ছিল বাঁশের ও কঞ্চি দিয়ে ঘেরা। সেটি সম্পূর্ণরূপে ধুলিসাৎ হয়ে যায়। পাঁচ,ছয়টি দোকানঘর ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়। তবে কপিলমুনির মন্দির চত্বরের দিকে টর্নেডো না এগোনোয় বড়সড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে কপিলমুনির মন্দির। মন্দিরে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। পশ্চিমদিক থেকে টর্নেডো এসে পূর্বদিক দিয়ে বেরিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
সাগর ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রিপল দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী তথা সাগরের বিধায়ক বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা জানিয়েছেন, বেশ কিছু নদীবাঁধ দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবনের নদীবাঁধগুলি মেরামতে অস্থায়ী কাজ চলছে। কিন্তু পরপর নিম্নচাপের প্রভাবে ও ভারী বৃষ্টিতে সেই কাজও পুরোদমে করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক জায়গাতেই মেরামত করা বাঁধের মাটি ধুয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে সেচদফতর ও পঞ্চায়েতকে সেই বাঁধে নতুন করে মাটি ফেলতে হচ্ছে। সেচদফতর ও জেলা প্রশাসন দুর্বল বাঁধগুলির ওপর সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে। এদিকে সুন্দরবনের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এভাবে অঝোরে বৃষ্টি চলতে থাকলে বাঁধভাঙার আতঙ্কে প্রহর গুণছেন তাঁরা।