পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ বিশ্বকাপ ফুটবল মানেই গ্ল্যামার। উদ্যাম নৃত্য। অবাধ জীবন-যাপন। দেদার মদ্যপান। খোলামেলা পোশাক। এই তালিকায় ফুটবলারদের পাশাপাশি থাকেন মাঠের দর্শক থেকে ক্রীড়া সাংবাদিকরাও। কে কত রকমের পদ্ধতি অবলম্বন করে বিশ্বকাপ উপভোগ করতে পারেন, তা নিয়েও মাঠের বাইরে চলে আলাদা একটা প্রতিযোগিতা। যদিও এই প্রতিযোগিতায় শামিল হতে দেখা যায়নি ওয়াদাত হাসুসিকে। লেবাননের মহিলা ফটো জার্নালিষ্ট মেনে চলছেন পর্দা প্রথা। বোরখার পাশাপাশি মাথায় হিজাব পরেই কভার করেছেন পাঁচ পাঁচটি ফিফা বিশ্বকাপ। এছাড়াও তিনি টোকিও-র ২০২০ অলিম্পিক গেমস এবং ২০১৭ সালে আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরাসে অনুষ্ঠিত ইয়ুথ অলিম্পিক গেমসও কভার করেছেন।
লেবাননে জন্ম হলেও ওয়াদাত এখন স্থায়ী বাসিন্দা সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর। ১৯৮৮ সালে তিনি লেবানন ছেড়েছেন তখনকার গৃহযুদ্ধের কারণে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে তিনি ফটোগ্রাফি নিয়ে পড়াশুনা করেন। পরে ক্রীড়ার ফটোগ্রাফিতে যুক্ত হন। এই ফটোগ্রাফির মাধ্যমে তার সাংবাদিকতায় আসা। আসলে এই সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন চোখে দিয়েছিলেন তার পিতাই। কারণ তার পিতাও ছিলেন ফটোগ্রাফার। ৬০ বছরের ওয়াদাত ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপ, ২০১৮তে রাশিয়া বিশ্বকাপ এবারে কাতার বিশ্বকাপেও মাতাচ্ছেন। হিজাবধারী এই মহিলা সাংবাদিককে ভারী ক্যামেরা নিয়ে ছুটতে দেখা যাচ্ছে মাঠের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তরে। এছাড়া তিনি কভার করেছেন ২০১৫ সালের কানাডা এবং ২০১৯ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত মহিলা বিশ্বকাপও। অনেকের প্রশ্ন, হিজাব পরে দেশ-বিদেশ ঘুরে স্পোর্টস ফটোগ্রাফিতে সমস্যা হয় না? জবাবে ধর্মপ্রাণ এই মুসলিম মহিলা ফটো জার্নালিষ্ট বলেন, ‘এটা আমরা ছোট থেকে করে আসছি। প্রতিটি মুসলিম মেয়ের উচিত পর্দা করে চলা। কারণ আমরা মুসলমান। কোনো মেয়ে মুসলামান কিনা তা চেনার উপায়ও এই হিজাব। আর এই হিজাবে আমার কাজ করতে সত্যি কোনও অসুবিধা হয় না। যদি কখনও অসুবিধা হত, তাহলে এতগুলি বিশ্বকাপ কভার করতে পারতাম না।’
এতগুলি বিশ্বকাপ কভার করলেও কাতারই তার কাছে সেরা। কারণ খুবই অল্প দূরত্বে সবকটা স্টেডিয়ামের অবস্থান। তিনি জানিয়েছেন, ব্রাজিল বিশ্বকাপে এক স্টেডিয়াম থেকে অন্য স্টেডিয়ামে যেতে তার প্রচুর সময় ও অর্থ খরচ হয়েছে।
রাশিয়ায় বিভিন্ন শহরে যোগাযোগের জন্য ট্রেন সার্ভিস ফ্রি ছিল। তাই দূরত্ব বেশি থাকলেও সমস্যা হয়নি। তবে কাতারে তাকে সেই সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়নি। সর্বোচ্চ এক ঘন্টায় তিনি এক স্টেডিয়াম থেকে অন্য স্টেডিয়ামে উড়ে বেড়িয়েছেন। আর নামাযের সময়ে জায়নামাযে দাঁড়িয়ে যাওয়া। যদিও এত সবের মধ্যে তিনি লাইম লাইটে এসেছেন হিজাব পরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়ায়। এর জন্য অবশ্য তাকে বহু জায়গায় অপদস্ত হতে হয়েছে।
তার কথায়, ‘এই হিজাব পরে রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে বিব্রতকর অবস্থায়ও পড়েছিলাম। ফাইনালের সময় একজন আমার মাথায় আঘাত করে। এতে আমার হিজাব খুলে যায়। যিনি এই কাণ্ড ঘটান, তিনি বলেছিলেন এটা দুর্ঘটনাবশত। যদিও আশপাশের সবাই আমাকে জানিয়েছিল, লোকটি ইচ্ছে করেই আমাকে আঘাত করেছিলেন। যদিও এসব নিয়ে আর মাথা ঘামায় না। এ সব বিষয়গুলি মানিয়ে নিয়েছি।’