পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: গুজরাতে ভোটের দিন ছিল ৭ মে। ভোট শেষ হতেই রাতের বেলা আহমদাবাদের ৬০০ বছরের পুরনো এক দরগাহর উপর চড়াও হয় কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা। তারা দরগাহকে মন্দির দাবি করে। বাইরে সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দেয়। দরগাহর ভিতরে থাকা পিরানা পীর ইমাম শাহ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের কবর ভেঙে দেওয়া হয়। পীর ইমাম শাহর বংশধর সৈয়দার মাজারও ভাঙা হয়।
দরগাহর পাশে একটি মসজিদ রয়েছে। ফলে উত্তেজনা ছড়ায় মুহূর্তের মধ্যে। একটি ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে প্রচুর পুলিশ ও গেরুয়া পতাকা নিয়ে বহু মানুষ এবং চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ভাঙচুরের চিহ্ন। দরগাহর উপরে গেরুয়া পতাকা দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়। হিন্দুরা দাবি করতে থাকে পিরানা পীর ইমাম শাহ আসলে হংসতেজ মহারাজ। মহারাজের একটি মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে দেওয়া হয়। ৬০০ বছরের পুরনো এই ঐতিহাসিক দরগাহ যে গ্রামে রয়েছে সেটি পীর সাহেবের নামে পিরানা গ্রাম নামে পরিচিত।
পুলিশ জানায়, দুই দলের মধ্যে ইট-পাথর ছোঁড়া ও ভাঙচুরের ঘটনায় ৩৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই দরগাহ ছিল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির। হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে আসেন। পুলিশ সুপার ওম প্রকাশ জাট বলেন, কবর ধ্বংস করা হয়েছে বলে একদল মানুষ উত্তেজিত হয়ে ওঠে। পীর বাবার মাজারকে টার্গেট করে একশ্রেণির মানুষ। সম্পত্তি ক্ষতি করা ও গোলমাল করার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৭ জনকে।
স্থানীয়রা জানায়, গত বছরও গোলমাল শুরু হয়েছিল এখানে। একদল মানুষ পীর ইমাম শাহ বাবাকে বলতে থাকে সদগুরু হংসতেজ মহারাজ। এলাকার মুসলিমরা আপত্তি জানায়। তারা অভিযোগ করে মাজারকেও গেরুয়াকরণ থেকে রেহাই দেওয়া হচ্ছে না হিন্দুদের দাবি, ৪০০-র বছরের আগে গ্রন্থে উল্লেখিত আছে ‘হংসতেজ মহারাজের’ কথা। এর আগে ২০২২ সালে পুলিশ সহ একদল মানুষ এসেছিল চত্বরে পাঁচিল দিয়ে দরগাহ ও মন্দিরের জায়গা পৃথক করার উদ্দেশে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
দরগাহর ট্রাস্টিরা আপত্তি জানায়, সেই সময় ব্যানার টাঙানো হয় ‘ওম শ্রী সদগুরু হংসতেজ মহারাজ অখণ্ড দিব্যজ্যোতি মন্দির’ নাম দিয়ে। সেই মামলা হাইকোর্টে পৌঁছয়। মুসলিমদের ধর্মীয় অধিকার কেড়ে নিয়ে দরগাহকে মন্দির বানিয়ে ফেলার অভিযোগ জানানো হয়েছে কোর্টে।
মসজিদ ও মাজারের জায়গা নিয়ে মন্দির বানানো এবং পীর সাহেবকে মহারাজ বানানোর সেই পুরনো উদ্যোগ ফের দেখা গেল লোকসভা ভোটের শেষে ৭ মে রাতে। অনেকেই মনে করছেন গুজরাতেও এবার ভালো ফল করতে পারবে না বিজেপি। সেজন্য ধর্মীয় বিভাজন শুরু করে দিয়েছে। অবশ্য পুলিশ জানায়, গ্রেফতারের পর এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।