পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: : বাঁচতে মাথা গোঁজার শুধু একটু জায়গা দরকার ছিল। গাজার একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল ওরা।
কিন্তু মৃত্যু পিছু ছাড়ল না, এক রাতের মধ্যে ইহুদি বাহিনীর বোমা বর্ষণে শেষ ৩০টি প্রাণ। সব হারিয়ে আজ নিঃস্ব সানা। গাজার বাসিন্দা সানা দুবাইতে কর্মরত।
গাজায় ইহুদি বাহিনীর বোমাবর্ষণে শেষ তার ৩০ জন প্রিয় মানুষ। মৃতদের বয়স ৮ থেকে ৬৫। তারা সবাই রাফাহ শহরের একটি তিনতলা ভিলায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু ১৬ অক্টোবর ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত একসঙ্গে কেড়ে নিল এতগুলি তাজা প্রাণ।
দুবাইয়ের মল অফ দ্য এমিরেটসের একটি বিপণন সংস্থায় মুখে সাহসী হাসি নিয়ে নিজের কাজ সামলে চলেছেন সানা। কিন্তু এই হাসির পিছনে রয়েছে তাঁর প্রিয়জন হারানোর শোক। মানসিকভাবে বিধবস্ত থেকেও নিজের কর্তব্য পালন করে চলেছেন তিনি। মৃতদের মধ্যে ছিল সানার কাকার মেয়ে আলিয়া।
মাত্র ২২ বছরের আলিয়া দুবাইতে একজন পুষ্টিবিদ হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। নিজের করুণ পরিস্থিতির কথা জানাতে গিয়ে বার বার কেঁপে উঠেছে সানা। চোখের জল বাধ মানছে না। কি অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন তাও বোঝানো সম্ভব নয়। বোন আলিয়াকে হারিয়েছেন। হামলায় আলিয়ার মা চলে গেছেন। বার বার সানা তার বোন আলিয়াকে পাঠানো হোয়াটস-অ্যাপ মেসেজগুলি দেখছেন। যেখানে সানা লিখছেন, ‘আলিয়া তুমি কোথায়? দয়া করে জানাও তোমরা কেমন আছো? বার বার স্মৃতি হাতড়ে মেসেজ স্ক্রোল করে চলেছেন সানা। কিন্তু পরে সত্যিটা সামনে আসতেই সম্পূর্ণ ভেঙে পরেও বাঁচার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। গত ১৬ অক্টোবরের রাত ৮টা নাগাদ উত্তর-পশ্চিমের রাফার ওই আবাসনে বিমান হামলা চালায় ইহুদি বাহিনী। এক মুহূর্তের নিভে যায় জীবনের আলো।
সানা জানান, ৩০টি নিথর দেহ ধবংসস্তূপ থেকে বের করা হয়। নিহতদের মধ্যে কাকা, উনি ভিলার মালিক ছিলেন, তার স্ত্রী, তাদের মেয়ে নায়লা এবং তার চার সন্তান ছিল। সানা জানান, ওই বাড়িটা তাদের খুব নিরাপদ মনে হয়েছিল। কয়েক সপ্তাহ আগেই তাঁরা ওই বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সানা আরও জানান, আমার কাকা সৌদি আরবে থাকতেন, ছুটিতে গাজায় স্বপরিবারে এসেছিলেন। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল। বোন বিবাহিত, অন্যত্র থাকত, কিন্তু বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে বাচ্চাদের নিয়ে এখানে এসেছিল। সব শেষ। তাদের দুই সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত। ছোটটির বয়স ছিল আট বছর। তাদের সবাই মারা গেছে।
২০২১ সালের পরিবারের সঙ্গে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলি বার বার দেখে চলেছেন সানা। ওরা আর ফিরবে না, মানতে পারছেন না সানা। সানার মতো এক মহিলা চিকিৎসকও গত রবিবারের হামলায় তাঁর পরিবারকে হারিয়েছেন।