পুবের কলম প্রতিবেদক: ফের দুটি মসজিদ বন্ধ করল ফ্রান্স। ওজর সেই একই, নিরাপত্তা। স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে উত্তর ফ্রান্সের দুটি মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে ট্যুরকোয়িং সিটি প্রশাসন। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, গত ১৮ মাসে ২২টি মসজিদ বন্ধ করা হয়েছে। তবে যে ক্ষমতাবলে এসব বন্ধ করা হয়েছে তার সমালোচনা করেছেন রাষ্ট্রসংঘ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মীরা।
লা ভয়ক্স ডু নর্ড দৈনিক বলছে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে যে দুটি মসজিদ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সেই মসজিদ দুটি হল সালমান আল ফারসি মসজিদ এবং ক্লিনকুয়েট মসজিদ। প্রশাসনের দাবি, এই দুটি মসজিদে জমায়েত নাকি নিরাপত্তার জন্য উপযুক্ত নয়। দৈনিকটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে, মেয়র ডোরিয়েন বেকিউ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত শহরের পাঁচটি মসজিদের মধ্যে দুটি বন্ধ করার আদেশ দেন। ডেপুটি মেয়র এবং পৌরসভার নিরাপত্তা বিষয়ক দায়িত্বে থাকা এরিক ডেনোউড দাবি করেছেন, মসজিদগুলোতে তল্লাশি চালানোর সময় ভবনগুলোতে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কিছু ঘাটতি ধরা পড়ে। তিনি বলেন প্রয়োজনীয় সংস্কার না করা পর্যন্ত মসজিদ দুটি বন্ধ থাকবে।
২০২১ সালের আগস্টে, ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ ‘বিচ্ছিন্নতাবাদ বিরোধী’ আইন অনুমোদন করেছে। এইভাবে মুসলিমদের পৃথক করার যে ছক তারা কষেছে তার সমালোচনা হয়েছে ফ্রান্সের বিভিন্ন মহলে। সরকারের দাবি আইনটি ফ্রান্সের ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে তৈরি। কিন্তু সমালোচকরা মনে করেন যে এটি ধর্মীয় স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করে মুসলিমদের প্রান্তিক করার কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়।
ফ্রান্সে প্রায় আড়াই হাজার মসজিদ রয়েছে। এর মধ্যে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ মতাদর্শ প্রচার সন্দেহে ৯০টি মসজিদে তদন্ত চালানো হয়েছে বলে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। ইউরোপে সবচেয়ে বেশি মুসলমান যেসব দেশে বাস করে ফ্রান্স তাদের একটি । কিন্তু সেখানকার মুসলমানরা বলছেন, দেশটি ক্রমে মুসলমানদের জন্য বৈরী হয়ে উঠছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, ২০২১ সালে মুসলিমবিরোধী বৈষম্যমূলক আচরণ বেড়েছে। আর অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা কমেছে।
ফ্রান্সের উত্তরপশ্চিমের আলন শহরের এই মসজিদটি গত অক্টোবরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইসলামের মৌলবাদীতা প্রচার ও ফ্রান্সের প্রতি ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগ এনে মসজিদটি বন্ধ করা হয়। কিন্তু মসজিদের কর্মকর্তারা অভিযোগ অস্বীকার করেন। মসজিদ বন্ধ করার প্রমাণ হিসেবে সরকারের পক্ষে থেকে ২০ পাতার একটি নথি আদালতে উপস্থাপন করা হয়। সেটি রয়টার্স বিশ্লেষণ করে বলছে, নথিটি কবে তৈরি হয়েছে, কে করেছে এবং তথ্য কোথা থেকে পাওয়া গেছে তার কোনো উল্লেখ নেই।
যে আইনে মসজিদ বন্ধ করা হয় তাতে কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ ছয় মাসের জন্য মসজিদ বন্ধ করতে পারে। তবে অধিকার কর্মী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেখা গেছে, অনেক মসজিদই আর কখনো খোলা হয় না। বন্ধ হওয়া ২২টি মসজিদের মধ্যে কতটি আবার খুলেছে সে হিসাব মন্ত্রণালয় জানায়নি।