পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ভারতে আসতে চলেছে আরও ১২ টি আফ্রিকান চিতা। জানা গেছে চলতি মাসের ১৮ তারিখে আসবে এই নতুন অতিথিরা। মধ্যপ্রদেশের শেওপুর জেলার ‘কুনো জাতীয় উদ্যানে’ এদের ঠাঁই হবে বলে জানা গেছে। এই ১২ টি চিতার মধ্যে ৭ টি পুরুষ ও ৫ টি মেয়ে বলেই সূত্রের খবর। নামবিয়া থেকে আগত ৮ টি চিতার সঙ্গেই বেড়ে উঠবে এরা। গত বছর প্রথম একদল চিতা আনা হয়েছিল ভারতে। এবার দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চিতার দ্বিতীয় ব্যাচ আসছে। এর ফলে এখানে চিতার সংখ্যা ৮ থেকে বেড়ে ২০ হয়ে যাবে।
সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বন দফতরের এক মুখ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ থেকে গোয়ালিয়রে আনা হবে তাদের। ভারতীয় বায়ুসেনার একটি এয়ারক্র্যাফ্ট নিয়ে আসবে ওই ১২ টি চিতাকে। ৭ টি পুরুষ ও ৫ টি মেয়ে চিতাকে নিয়ে শুক্রবার রাতে আফ্রিকার গুয়েতাংয়ের ট্যাম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এয়ারক্র্যাফ্টটি রওনা দেবে। শনিবার ভারতে এসে পৌঁছাবে সেটি। সেখান থেকে চিতাগুলিকে প্রথমে গোয়ালিয়রে নিয়ে আসা হবে। তারপর সেখান থেকে হেলিকপ্টারে করে ১৬৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে চিতারা পৌঁছবে কুনো জাতীয় উদ্যানে। শনিবার বেলা ১২টা নাগাদ তারা পৌঁছবে কুনোর জঙ্গলে। সাড়ে ১২টা নাগাদ তাদের ছাড়া হবে কোয়ারেন্টাইন বোমাতে।
এই প্রসঙ্গে কুনো জাতীয় উদ্যানের এক আধিকারিক বলেন, নতুন এই অতিথিদের জন্য ১০ টি কোয়ারেন্টাইন বোমা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি খাঁচায় রাখা হবে জোড়া চিতা। আমাদের তরফে সব কিছু প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। এবার শুধু অতিথিদের আসার প্রহর গুনছি আমরা।
এদিন তিনি আরও বলেন, গত বছরের শেষের দিকে আফ্রিকা থেকে একদল চিতা বিশেষজ্ঞ ভারতে এসে কুনো জঙ্গল পরিদর্শন করে গেছেন। তারপর আফ্রিকার প্রশাসনের সঙ্গে ভারতের মউ চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
এর আগে ২০২২-এর ১৭ সেপ্টেম্বর নামিবিয়া থেকে এখানে ৮ টি চিতা আনা হয়েছিল। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাদের অভয়ারণ্যে প্রবেশ করিয়ে ছিলেন। এবার চিতাগুলোকে ছেড়ে দেবেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান এবং কেন্দ্রীয় বনমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ। গতবার যে রুট থেকে চিতা আনা হয়েছিল, এবারও সেই রুট দিয়েই আনা হবে।
কুনোর জঙ্গলে সাধারণত নীলগাই, লেপার্ড, কৃষ্ণসার হরিণ, প্যান্থার, শেয়াল, হায়েনা এবং ভাল্লুকের দেখা মিলত। এমনকী কুনোর নদীতে জলজ প্রাণীর সংখ্যাও নেহাত কম ছিল না। তবে চিতা আসায় পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে কুনো।
কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার তরফে এই চিতাগুলি ভারতকে উপহার দেওয়া হয়েছে। তবে চিতাগুলিকে দেশে স্থানান্তরিত করার জন্য খরচ পড়ছে মাথা পিছু ৩ হাজার মার্কিন ডলার। অথএব ১২টি চিতাকে নামবিয়া থেকে উড়িয়ে আনতে খরচ হয়েছে মোট ২৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা।
প্রসঙ্গত, সাত দশক আগে ভারত থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায় চিতা। বিশ্বের দ্রুততম এই প্রাণীকে ফের দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতে একসময় চিতা থাকলেও নির্মম শিকারের কারণে পরে তা বিলুপ্ত হয়ে যায়। ভারতে আবার নতুন করে চিতার বংশবৃদ্ধির জন্য গত বছর সেপ্টেম্বরে আফ্রিকা থেকে আটটি চিতা মধ্যপ্রদেশের কুনোর জঙ্গলে আনা হয়।