পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: বয়স পার হয়েছে, তবে কমেনি দুজনের মনের উষ্ণতা। একজনের ১০০ আর অপরজনের ৯৬। এই বয়সে এসেও কমেনি একে অপরের প্রতি মায়া। ছেড়ে থাকা তো দূর কি বাত, একে অপরকে চোখের আড়ালও করতে চাননা ট্রেরেন্স ও শার্লিন। তাই এই বয়সে এসেও বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওরা। প্রেমের কোনও বয়স হয় না। গল্পে, উপন্যাসে, বাস্তবে এর আগে বহু বার তা প্রমাণিত হয়েছে। ফের এক বার সে কথা মনে করিয়ে দিল নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা হ্যারোল্ড টেরেন্স এবং জেনি শার্লিনের প্রেমকাহিনি। প্রেম পরিণতিও পেতে চলেছে। ফরাসি শহরে ক্যারেন্টান-লেস মারাইসে হয় বিয়ে। ডি- ডে উদযাপনের ৮০ তম বার্ষিকীতে সম্মানিত হওয়ার কয়েকদিন পরেই এই অনুষ্ঠান হয়। শনিবার জিন সোয়ারলিনের সঙ্গে টেরেন্সের বিবাহের পর একটি ছোট অনুষ্ঠানের মধ্যে বিবাহের অনুষ্ঠান হয়। মেয়র জিন-পিয়েরে লোনিউর বলেন, আমরা অত্যন্ত সম্মানিত যে ক্যারেন্টানকে টেরেন্স এখানে বিয়ে করার জন্য বেছে নিয়েছেন।
হ্যারোল্ড বায়ুসেনায় কাজ করতেন। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। পড়ুয়া অবস্থায় বায়ুসেনায় যোগ দেন হ্যারোল্ড। তখন হ্যারল্ডের বয়স ২০। চাকরি সূত্রে ইংল্যান্ড পাড়ি দেন। বেশ কয়েকবছর সেখানেই কেটেছে তাঁর। হঠাৎই ইংল্যান্ড ছেড়ে যাযাবর হয়ে যান। ইউক্রেন, বাগদাদ, তেহরান-সহ বিভিন্ন দেশ পাড়ি জমায় সে। বেশ কয়েক বছর এ ভাবে চলার পর জীবনে থিতু হতে চান তিনি। তাই আবার আমেরিকায় ফিরে আসেন। নিজের মাটিতে ফিরে নতুন জীবনও শুরু করেন। সংসার পাতেন দীর্ঘ দিনের বন্ধু থেলমার সঙ্গে। বছর দুয়েকের মধ্যে দুই সন্তান আসে। স্ত্রী, সন্তানকে ছেড়ে কাজে ফেরার ইচ্ছা ছিল না হ্যারোল্ডের। কিন্তু স্ত্রীর জোরাজুরিতেই বাধ্য হয়েই কাজে যোগ দেন তিনি। হ্যারল্ড চলে যাওয়ার পর সংসার এবং সন্তানের সমস্ত দায়িত্ব গিয়ে পড়ে থেলমার উপর। দায়িত্ব পালনে অবশ্য কোনও ত্রুটি রাখেননি তিনি। সন্তানেরাও বড় হয়ে নিজেদের মতো জীবন গুছিয়ে নেয়। কিন্তু নিয়তির লেখন কেউ বদলাতে পারে না। ২০২১ সালে চাকরি থেকে পুরোপুরি অবসর নিয়ে বাড়ি এলেও, সুখ পান নি হ্যারল্ড। বাড়ি ফেরার কিছুদিনের মধ্যেই মারা যান প্রাণপ্রিয় স্ত্রী থেলমা। স্ত্রীর মৃত্যুর পর পুরোপুরি একা হয়ে যান হ্যারল্ড। দুই ছেলে কর্মসূত্রে ভিনদেশে। জীবনের শেষ পর্যায় নিঃসঙ্গে কাটুক তা চাননি তিনি। ওই যে নিয়তির লেখন, এই নিঃসঙ্গ জীবনে হঠাৎই আলাপ জেনির সঙ্গে। জেনি অবিবাহিত ছিলেন। মনের মতো কাউকে পাননি, তাই সংসারও পাতা হয়নি। ৯৬ বছর বয়সে হ্যারল্ডের সঙ্গে আলাপ হওয়র পর জেনির মনে হয়েছিল, এই মানুষটিরই অপেক্ষা করছিলেন। তাই সময় নষ্ট না করে নিজেই মনের কথা খোলসা করেন। একা থাকতে আর কে চায়! তাই আর দেরি করেননি, জেনির সঙ্গে জীবনের বাকি দিনগুলি হেসেখেলে কাটিয়ে দিতে চেয়ে আবার নতুন করে শুরু করেন।