পারিজাত মোল্লাঃ ২০১১ সালে রাজ্যে শাসন ক্ষমতায় পালাবদলে নন্দীগ্রামের পাশাপাশি সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।সিঙ্গুরে টাটাদের কোন শিল্প গড়ে উঠেনি।সেই জমি নিয়ে ফের আইনী প্রশ্নচিহ্ন উঠলো। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে সিঙ্গুরে জমি সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলে। রাজ্য সরকার সিঙ্গুরের জমি নিয়ে কী ভাবছে?
সিঙ্গুরের অধিকৃত জমি নিয়ে রাজ্য সরকারের অবস্থান কী? সেই বিষয়ে জানতে চাইল কলকাতা হাইকোর্ট।এদিন প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলে।রাজ্য সরকার কে বক্তব্য জানানোর জন্য চার সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে ।এই সময়সীমার মধ্যে রাজ্য কে সিঙ্গুরের জমি প্রসঙ্গে কলকাতা হাইকোর্টকে বিস্তারিত জানাতে হবে। বাম জমানায় সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণ হয়েছিল।
টাটাকে কারখানা করার জন্য ওই জমি তুলে দিয়েছিল তৎকালীন বামেদের বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার। সেই কারখানা হয়নি।সুপ্রিম কোর্টে মামলা যায়। দীর্ঘ সময় সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলার পরে কৃষকদের জমি ফেরতের নির্দেশ দেয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। এছাড়াও জমি ফেরতের বিষয়ে বিবেচনা করবে রাজ্য সরকার। কিন্তু সেই নির্দেশ দেওয়ার পরেও কোনও আশার আলো দেখেননি জমিদাতারা।
সেই অভিযোগ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয়েছেন জমি মালিকদের একাংশ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর জমিদাতারা রাজ্য সরকারের কাছে বহুবার আবেদন করেছেন। রাজ্য সরকারের থেকে কোনও সমাধান সূত্র দেওয়া হয়নি । এই অভিযোগ উঠে এসেছে। সেই কারণেই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তারা।সিঙ্গুরের জমি ফেরত দিতে হবে। শুধু জমি ফেরত নয়, আগের অবস্থায় অধিগ্রহণ করা ওই জমি ফেরত দিতে হবে।
এই দাবি আদালতের কাছে রাখা হয়েছে। গত ২০১৬ সুপ্রিম কোর্ট সিঙ্গুরের জমি কৃষকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে । তারপর এতগুলো বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু কৃষকদের কাছে আগের অবস্থায় সেই জমি ফেরত আসেনি বলেই অভিযোগ।ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুরে সর্ষের বীজ ছড়িয়ে ছিলেন।
যদিও ওই জমিতে চাষাবাদ করা কার্যত সম্ভব হয়নি। সিঙ্গুরের কিছু জমিতে মাছ চাষের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।বৃহস্পতিবার শুনানির সময় রাজ্য কে চার সপ্তাহ সময় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ। সিঙ্গুরের জমি নিয়ে কী ভাবছে রাজ্য সরকার? সিঙ্গুরের জমি ফেরত নিয়ে রাজ্য সরকারের অবস্থান কী?
সেই কথা জানতে চাইল ডিভিশন বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরও সিঙ্গুরের জমিহারাদের এখনও কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হল না। জমি ফেরতের বিষয়টিও কেন এখনও সম্পন্ন করা হয়নি। এ ব্যাপারে রাজ্যের অবস্থান কী?বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চে উঠে এই মামলা।
ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, এ ব্যাপারে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যকে নিজেদের অবস্থান জানাতে হবে। গত ২০০৬ সালে সিঙ্গুরে টাটা মোটরস কে ১ হাজার একর কৃষি জমি দিয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার। বহু ফসলি কৃষি জমিতে শিল্প স্থাপনের প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছিলেন বাংলার তত্কালীন বিরোধী দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নেতৃত্বে জমি রক্ষা কমিটি গড়ে আন্দোলনে নামেন সিঙ্গুরের চাষিরা। এরই মাঝে ২০১১ সালে পালাবদল ঘটে। অপরদিকে সিঙ্গুর থেকে কারখানা না হওয়ায় জন্য রাজ্যকে দায়ী করে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আরব্রিটাল ট্রাইবুনালে মামলা করেছিল টাটাগোষ্ঠী। গত বছরের ৩০ অক্টোবর এ ব্যাপারে ট্রাইবুনাল জানিয়ে দিয়েছে, -‘টাটা গোষ্ঠীকে ৭৬৬ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে’। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে চার সপ্তাহ পর এই মামলার শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে।