পুবের কলম প্রতিবেদকঃ দেরিতে হলেও অ্যাকশন মুডে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। নবী সা. নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যকারী বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে অবশেষে সাসপেন্ড করতে হল। একই অভিযোগে দিল্লির বিজেপি নেতা ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান নবীন কুমার জিন্দাল বহিষ্কার করা হয়। নবীন জিন্দালের দলের প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করা হয়েছে।
রবিবার সকালেই ধারণা পাওয়া যাচ্ছিল বিজেপির ন্যাশনাল জেনারেল সেক্রেটারি অরুণ সিংয়ের প্রেস রিলিজ ছড়ানোর প্রবণতা দেখে। পরে জানা গেল, ওমানের গ্রান্ড মুফতি শাইখ আহমদ বিন হামাদ আল খালিলির ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক প্রচণ্ড চাপে ফেলে দেয় ভারত সরকারকে। পণ্য বয়কট ডাকের প্রভাব শুধু ওমানে সীমাবদ্ধ থাকেনি সউদি আরব।
কাতার, কুয়েতের সুপারমার্কেট ও শপিং মল থেকে তাড়াতাড়ি নামিয়ে রাখা হয় ভারতীয় পণ্য। ওমানের মুফতির ডাকের এত তীব্র প্রতিক্রিয়া হতে পারে এটা ধারণা ছিল না হয়তো সেই সব দেশের ভারতীয় দূতাবাসের।
মুফতি লিখেছেন, ভারতের একটি কট্টরবাদী দলের মুখপাত্র আল্লাহর নবী সা. এবং তাঁর স্ত্রী আইশা (রা.) সম্পর্কে তীব্র আপত্তিকর মন্তব্য করেছে, এটা সমস্ত মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ঘোষণার শামিল। মুসলিম ঐক্যের ডাক দিচ্ছি।
ওমানের ভারতীয় দূতাবাস তড়িঘড়ি রবিবার অরুণ সিংয়ের প্রেস রিলিজ ছড়ানোর চেষ্টা করে। অরুণ সিং লিখেছেন, ভারতীয় জনতা পার্টি সব ধর্মকে সম্মান করে। কোনও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্যের নিন্দা করে বিজেপি। কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায় ও তাদের ধর্মের প্রতি আপত্তিকর মনোভাব প্রদর্শনেরও কঠোর বিরোধী বিজেপি।
বিজেপির সাধারণ সচিব আরও লিখেছেন, ভারতের সংবিধান সব ভারতীয়কে অধিকার দিয়েছে নিজ নিজ ধর্ম অনুশীলন ও পালনের। সব ধর্মকে সম্মান জানাতে শিখিয়েছে।
অপরদিকে বিজেপির ডিসিপ্লিনারি কমিটির সম্পাদক ওম পাঠক নূপুর শর্মাকে লিখেছেন, আপনি যেসব মন্তব্য করেছেন তা আমাদের দলের ভাবাদর্শের বিপরীত। আপনাকে জানানো হচ্ছে, পুনরায় তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে দলের সমস্ত দায়িত্ব পদ থেকে সাসপেন্ড করা হল। যদিও, সাসপেনশনের পর নূপুর শর্মা লিখেছেন, আমি নিঃশর্তভাবে আমার মন্তব্য ফিরিয়ে নিলাম।
নূপুর শর্মা টিভি চ্যানেলে নবী সা. সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন এক সপ্তাহ আগে। তাঁর বিরুদ্ধে মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা, উত্তরপ্রদেশ এবং দিল্লিতে এফআইআর দায়ের হয়েছে। নূপুর শর্মা তাঁর মন্তব্যে অনড় আর বিজেপির কোনও নেতা এতদিন নূপুর শর্মার মন্তব্য নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। এমনকী উত্তরপ্রদেশে নবী সা. অবমাননা নিয়ে প্রতিবাদ ও বন্ধের ডাক দেওয়া হয়। সেখানে গোষ্ঠী সংঘর্ষ থামাতে অ্যাকশন নিতে হয় পুলিশকে। কিন্তু হঠাৎ রবিবার অরুণ সিংয়ের প্রেস রিলিজ ছড়িয়ে পড়ে রাজনৈতিক মহলে। আর তারপরই নূপুর শর্মার সাসপেনশানের খবর। অনেকেই মনে করছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ‘বয়কট ইন্ডিয়া’ ডাক দেওয়া ট্যুইটার হ্যান্ডেলের অনুসারীর সংখ্যা দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন ওমানে থাকা ভারতের দূতাবাস। কেন-না এই বয়কটের ডাক দিয়েছেন ওমানের গ্র্যান্ড মুফতি যাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা আরব দুনিয়ায় এই মুহূর্তে সর্বাধিক। শুধু ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দেওয়া নয়, ভারতের সঙ্গে সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধের ডাকও দেওয়া হয়। গোটা আরব দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে মুফতির এই বয়কট ইন্ডিয়া ডাক।
উল্লেখ্য, তিনদিন আগে আমেরিকার পক্ষ থেকে এক রিপোর্ট প্রকাশ করে জানানো হয় ভারতে সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন চলছে পুলিশ-প্রশাসনের মদদেই। সেই রিপোর্টের কড়া নিন্দা জানাতে হয় ভারতের বিদেশ মন্ত্রককে। একদিকে আমেরিকার চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট, আর অপরদিকে আরব দুনিয়াজুড়ে ‘বয়কট ইন্ডিয়া’র ডাক। যার ফলে নূপুর শর্মাকে সাসপেন্ড করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া ছাড়া বিজেপির সামনে আর কোনও বিকল্প ছিল না। অবশ্য আরব দুনিয়ার মানুষ ট্যুইটারে লিখেছেন, যদি আল্লাহর নবী সা.-র উপর আপত্তিকর মন্তব্যকারীর জেল না হয় তাহলে তারা প্রয়োজনে পথে নেমে প্রতিবাদ করবে। অনেকে লিখেছেন, বিজেপি নূপুর শর্মার মন্তব্য থেকে নিজেদের দূরত্ব বজায় রাখার ঘোষণা করলেও কিন্তু এবার গ্রেফতার করতে হবে নূপুর ও নবীনকে।
উল্লেখ্য, ওমানের গ্রান্ড মুফতি ইতিপূর্বেও অসমের মুসলিমদের উপর অত্যাচারের ঘটনাবলিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। এবার তাঁর বয়কটের ডাক প্রভাব ফেলতে চলেছে ভারত মধ্যপ্রাচ্যের মধুর সম্পর্কের উপর।