দেবশ্রী মজুমদার,বোলপুর, ঘরে বাইরে প্রবল চাপের মুখে পড়ে বহিষ্কৃত তিন ছাত্র ছাত্রীকে তলব করলো বিশ্বভারতীর তদন্ত কমিশন। তাই নিয়েও ফের সমালোচনার মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওই তিন পড়ুয়াকে আগামী ১০ আগস্ট সকালে তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হতে হবে। নচেৎ তাদের গড় হাজিরায় এক তরফা সিদ্ধান্ত নিতে পারে কমিশন, এমন সতর্কতা মূলক নির্দেশ রয়েছে ওই চিঠিতে।
উল্লেখ্য , চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারী অর্থনীতি ও রাজনীতি বিভাগের ছাত্র ফাল্গুনী পান ও সোমনাথ সাউ এবং হিন্দুস্থানী শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বিভাগের ছাত্রী রূপা চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি বসিয়ে তাদেরকে সাসপেন্ড করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপাচার্যের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করায় ও আন্দোলন করার জন্যে প্রথমে তিন মাসের জন্যে তাদের সাসপেন্ড করা হয়, বলে একাংশের দাবী । তাদের সাসপেনশনের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছিল, একটি তদন্ত কমিটি পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখে নিজের সিদ্ধান্ত জানাবে। সাসপেনশানের সময়সীমা শেষ হতেই ফের আবার তিন মাসের জন্যে তাদের সাসপেনশনের মেয়াদ বাড়ে। দ্বিতীয় বারের মেয়াদ শেষ হওয়ার মুখে, অর্থাৎ ১৪ জুলাই থেকে ফের ৩ মাসের জন্য সাসপেন্ড করে দেওয়া হয় ওই পড়ুয়াদের। যার বর্ধিত মেয়াদ থাকবে অক্টোবর মাস পর্যন্ত।এই তিন ‘বাম মনস্ক’ ছাত্র ছাত্রীকে গত ১৫ জুনের ভার্চুয়াল বৈঠকে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ‘মাওবাদী’ বলে অভিযুক্ত করেন।
এই সব উল্লেখ করেই বিশ্বভারতীর ভিতরে যেমন ছাত্র-অধ্যাপক-কর্মীদের একাংশ সরব হন, সেভাবেই অভিযোগ পাবার পর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও চিঠি পাঠিয়ে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা অবিলম্বে জানাবার নির্দেশ দেয়। অন্যদিকে বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর পক্ষ থেকে দিল্লীতে সাংসদদের সঙ্গে দেখা করে উপাচার্যের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ পত্র তুলে দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য, যাতে বিষয়টি সংসদে তোলা যায়। তাই নিজেদের গা বাঁচাতে কি এই তদন্ত কমিশনের প্রয়োজন? প্রশ্ন অনেকের।
যার কারণে প্রায় মাস পাঁচ-ছয়েকের পর আবার তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হবার নির্দেশ দেওয়া হল নিলম্বিত তিন পড়ুয়াকে। সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্বভারতীর পিএসএনএস এর ডিরেক্টর নারায়ণ চন্দ্র মণ্ডলের স্বাক্ষরিত সেই চিঠি পৌঁছয় ওই তিন পড়ুয়ার কাছে। সেখানে বলা হয়েছে আগামী ১০ আগস্ট সকালে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কনফারেন্স হলে তদন্ত কমিটির সদস্যদের মুখোমুখি হতে হবে ওই তিন পড়ুয়াকে।এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় সুত্রে জানা গেছে তিন পড়ুয়াকেই আলাদা আলাদা সময় দেওয়া হয়েছে তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হবার জন্যে।
তিন পড়ুয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ জারি করা হয়। সেই কমিটি গত ১৯ মার্চ পড়ুয়াদের মুখোমুখিও হয় কিন্তু তারপর সেই তদন্ত কমিটি কোনও সিদ্ধান্ত প্রকাশ করে নি। এমনকি ‘অভিযুক্ত পড়ুয়াদের মুখোমুখিও হয়নি বলেও অভিযোগ। তদন্ত কমিটি তাদের সিদ্ধান্ত না জানালেও এরই মাঝে আরও দুই দফায় ছ’মাসের জন্য সেই তিন পড়ুয়ার সাসপেনশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়।
ইতিমধ্যেই সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবি করার পাশাপাশি তদন্ত কমিটির ‘নিষ্ক্রিয়তার’ অভিযোগও বারবার তোলা হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও রাজনীতি বিভাগের ছাত্র সোমনাথ সাউ বলেন, “আমাদের চাপেই শেষ পর্যন্ত তদন্ত কমিটি সক্রিয় হতে বাধ্য হল। তবে এই বিষয়ে আমরা কী সিদ্ধান্ত নেব, তা আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেই ঠিক করব