নাজির হোসেন লস্কর: ব্যক্তিমানুষের সার্থকতা সমাজকে কেন্দ্র করেই। সমাজের স্বীকৃতির ওপর নির্ভর করে তার সম্পূর্ণতা। শুধু দল বেঁধে বাস করলেই সমাজ হয় না। প্রত্যেক মানুষ একে অপরের সুখ–দুঃখের কথা ভেবে সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া এবং সবাইকে শৃঙ্খলার বন্ধনে আবদ্ধ করে এগিয়ে নিয়ে গেলেই সমাজ পরিপূর্ণতা পায়৷ এমনই কাজে হাত লাগিয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের সংগ্রামপুর এলাকার কিছু মানুষ৷
সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তাঁরা সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন কর্মযজ্ঞের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন৷ প্রশাসনিক কর্তা, পুলিশ, চিকিৎসক, আইনজীবীর পাশাপাশি আছেন ধর্মগুরুরাও৷ সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের পাশে আস্থার হাত বাড়াতে ২০১৯ সালে এঁরা গড়ে তোলেন ‘সমব্যথী ট্রাস্ট’ নামের এক অরাজনৈতিক সংগঠন৷
শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, উন্নয়ন, দারিদ্র্যমোচন–সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় এই ট্রাস্ট৷ করোনার সময়ে ১৪০০ পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সাহায্য করে৷ ৩৫ দুঃস্থ বাবা–মায়ের কন্যাদায়ে আর্থিক সহায়তা দেয়৷ কৃতী পড়ুয়াদের সম্মাননা, দুঃস্থ মেধাবি পড়ুয়াদের মিশনারি স্কুলে ভর্তি করা, বিনামূল্যে কোচিংয়ের ব্যবস্থা ইত্যাদি সহ নানাভাবে গ্রামের পিছিয়ে পড়া মানুষদের সহায়তা দিয়ে চলেছে তারা৷
বছর শেষে ‘মেধা অন্বেষা’ বৃত্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা করে সংস্থা৷ যেখানে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির শ’খানেক পরীক্ষার্থীকে উদ্বুদ্ধ করতে উপস্থিত হন এসডিপিও মিথুনকুমার দে৷ তাঁর কথায়, ‘সমাজের উন্নতির জন্য এমন একটি পরোপকারী প্রচেষ্টার বিষয় দেখে খুবই ভালো লাগল৷ এদের কাজ আরও ত্বরাণ্বিত হোক৷’ জানুয়ারির শেষে সংস্থার পক্ষে সংগ্রামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ৩ দিনের বার্ষিক ক্রীড়া, নিখরচায় স্বাস্থ্যপরীক্ষা, চক্ষুপরীক্ষা, রক্তদান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়৷ যার মধ্যে ছিল ক্বেরাত, গজল, সাধারণ জ্ঞানের পাশাপাশি ইসলামিক ক্যুইজ–সহ ছিল নানা খেলাধূলা৷
হাজারের বেশি মানুষ তাতে অংশগ্রহণ করেন৷ অনুষ্ঠানে এসে ‘সমব্যথী’ কর্তৃপক্ষের ভূয়সী প্রশংসা করেন ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডেপুটি সুপার সুপ্রিম সাহা৷ তাঁর কথায়, ‘যৌথভাবে এ ধরনের কাজ সত্যিই প্রশংসনীয়৷ যা একটি সমাজকে শিখরে পৌঁছে দেয়৷’ প্রতিষ্ঠানের সহসম্পাদক সৈয়দ সানোয়ার বলেন, ‘সমব্যথী ট্রাস্ট’ একটি অরাজনৈতিক সংস্থা৷
চেষ্টা করছি পিছিয়ে পড়া সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার৷ মানববন্ধন, আলোচনাসভা, পথসভা এবং প্রচারপত্র বিলি–সহ বিভিন্নভাবে এলাকার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নানা সমস্যার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি৷ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি দুঃস্থ মুসলিম পরিবারের বাচ্চাদের সুন্নতি বা খাতনা থেকে শুরু করে পড়াশুনায় সর্বতোভাবে সাহায্যের চেষ্টা চালাচ্ছি৷
মদ–গাঁজা–জুয়া ইত্যাদি কু–কাজ থেকে মানুষকে দূরে রাখার জন্য সচেতনতা শিবির করে তাদের মূলস্রোতে ফেরানোর চেষ্টা করছি৷ একজন মানুষ সঠিক শিক্ষা গ্রহণ না করলে তার প্রভাব সমাজের ওপর পড়ে। মনে রাখা ভালো, সমাজ নিয়ে ভাবনার জন্য বয়স লাগে না, প্রয়োজন চিন্তা ও মানসিকতার। সুস্থ সমাজ গড়ার জন্য আমরা একে অপরের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিই৷ প্রতিবেশীর বেদনায় ‘সমব্যথী’ হই৷