সেখ কুতুবউদ্দিনঃ র্যাগিং। শব্দটার আভিধানিক অর্থ হই-হল্লা বা গোলমাল। আর হই-হল্লার মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নবীন পড়ুয়াদের পরিচিত হওয়ার নামই র্যাগিং, তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে র্যাগিং বাস্তবে ভিন্ন। সিনিয়রদের তিরস্কার বা আবেগের সঙ্গে কিছু করা। একটি পর্যায়ে পড়ুয়ারা নিতে পারলেও মাত্রাতিরিক্ত হলে তা নেওয়ার ক্ষমতা থাকে না পড়ুয়াদের। এতে আত্মহত্যা থেকে শুরু করে পথ বেছে নিতে পারে পড়ুয়ারা। এতে র্যাগিং মৃত্যুর প্ররোচনা হতে পারে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে স্বপ্নদীপের মৃত্যতে মাত্রারিক্ত র্যাগিংয়ের অভিযোগ। যা ওই পড়ুয়া নিতে পারেনি। আর তাতেই মৃত্যুর পথ বেছে নিতে বাধ্য হয় ওই পড়ুয়া। তবে অনেকে বলছেন ওই পড়ুয়াকে হস্টেলের তৃতীয় তল থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তবে এই ঘটনার পিছনে সিনিয়রদের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেন-এর অভিযোগও আনা হয়েছে। তবে পুরোবিষয়টি এখন পুলিশ ও আদালতের তত্বাবধানে রয়েছে। এই ঘটনায় শিক্ষা নিয়ে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও যাদবপুরের ঘটনায় শিক্ষা নিয়ে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, যাদবপুরে র্যাগিংয়ের ঘটনায় শিক্ষা নিয়ে প্রতিটি হস্টেলকে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। প্রতিটি হস্টেলে বসানো হয়েছে সিসিটিভি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬টি হস্টেল রয়েছে। নয়া পড়ুয়াদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেই নিয়ে কড়া নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা থাকেন হিন্দু-হস্টেলে। এছাড়া নিউ টাউনেও পড়ুয়াদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। সব হস্টেলে পড়ুয়াদের সঙ্গে র্যাগিং যাতে না হয়, এই নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলিয়ট সহ তিনটি হস্টেল রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টারের দাবি, মাঝে মধ্যে পড়ুয়াদের ঝামেলা হলেও তা পড়ুয়াদের মধ্যেই আপোষে মিটিয়ে নেওয়া হয়। তবে নয়া ভর্তি হওয়া পড়ুয়াদেরকে র্যাগিং করার অভিযোগ তেমন দেখা যায় না। তবে হস্টেল সহ ক্যাম্পাসে যাতে কোনও ভাবে র্যাগিং না হয়, তার জন্য হস্টেল চেয়ারম্যানদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ডায়মন্ডহারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার সাইদুল ইসলাম বলেন, এটি গার্লস বিশ্ববিদ্যালয়। মহিলাদের মধ্যে র্যাগিংয়ের অভিযোগ নেই বললেই চলে। তবে হস্টেল সহ ক্যাম্পাসে পড়ুয়াদের যাতে কোনও সমস্যায় পড়তে না হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বারাসত স্টেট ইউনিভারসিটিতেও র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা রয়েছে। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু- হস্টেলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পড়ুয়ারাও র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।
এদিকে র্যাগিংয়ের ঘটনায় রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নিয়ে গঠিত হবে অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার পর এবার রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়েগুলিকে নিয়ে র্যাগিং বিরোধী কমিটি গঠনে উদ্যোগী হয়েছেন রাজ্যপাল তথা রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য সিভি আনন্দ বোস। রাজ্যের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও উপাচার্যদেব ডেকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজ্যপাল। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘র্যাগিং-বিরোধী কমিটি’।
এদিকে র্যাগিং রুখতে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নির্দেশিকা আগেই পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই পড়ুয়াদের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম করাতে হবে। সেখানে তাঁদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে, র্যাগিং বা যৌন হয়রানি কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। বর্ণ, জাতি বা ধর্মের ভিত্তিতে কোনওরকম হয়রানি অভিযোগ উঠলে, ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি মেনে চলবে কর্তৃপক্ষ। সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাতে হবে।
পাশাপাশি ওয়ার্ডেন বা শিক্ষকদেরও এবিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা ও সাংস্কৃতিক বিভিন্নতাকে তুলে ধরতে হবে। এনিয়ে পড়ুয়া ও কর্মীদের মধ্যে নিয়মিত সমীক্ষা চালাতে হবে। এদিকে কোনও কোনও বিশ্ববিদ্যালয় র্যাগিং রুখতে হস্টেলে সিসিটিভি ক্যামেরার পাশাপাশি অ্যালার্ম ঘন্টা বসিয়েছে।
উল্লেখ্য, এ বছর, অ্যান্টি র্যাগিং কলসেন্টারগুলিতে মোট ২৮৮টি র্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িত ঘটনা অভিযোগ জমা পড়েছে। গত বছরে অভিযোগের সংখ্যা ছিল ৫১৫টি বলে ইউজিসি’র সূত্রের খবর।