পুবের কলম প্রতিবেদক: হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর ঘটনার কথা হামেশায় শোনা যেত। শিশু মৃত্যু ঠেকাতে রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, চিকিৎসা ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য এখন শিশু মৃত্যুর হার আগের থেকে কমেছে। রাজ্যের হাসপাতালগুলির নিরিখে শিশু মৃত্যুর হার কমানোর কাজে জাতীয় স্তরের স্বীকৃতি পেল রাজ্যের দুই সরকারি হাসপাতাল। একটি বারুইপুর মহকুমা হাসপাতাল ও অন্যটি বসিরহাট জেলা হাসপাতাল।
চিকিৎসকদের কথায়, দেশে প্রসূতি ও শিশু-মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে সর্বপ্রথম প্রয়োজন প্রসব-ঘরের (লেবার রুম) পরিকাঠামোর উন্নয়ন ঘটানো।
সব রাজ্যের প্রতিটি হাসপাতালে সেই মানোন্নয়ন কতটা হচ্ছে, ‘লক্ষ্য’প্রকল্পের মাধ্যমে সেটাই পর্যবেক্ষণ করে কেন্দ্রীয় সরকার।
প্রসব-ঘরের অবস্থা ও পরিষেবার মানের যথাযথ উন্নতি করা হলে অন্তত ৪৬ শতাংশ প্রসূতি-মৃত্যু এবং অন্তত ৪০ শতাংশ শিশু-মৃত্যু বন্ধ করা সম্ভব বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, শিশুদের চিকিৎসার বিষয়টি ‘খুবই ‘সেনসেটিভ। সেই বিষয়টি যাতে প্রতিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লক্ষ্য রাখতে এই নিয়ে নির্দেশকাও পাঠানো হয়েছে হাসপাতালগুলিকে।
তাই ২০১৮ সাল থেকে ‘লক্ষ্য’ (লেবার রুম কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট ইনিশিয়েটিভ) প্রকল্প চালু করে কেন্দ্রীয় সরকার। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কেন্দ্রের ওই প্রকল্পে বেশ কয়েকটি বিষয় বিশদে পর্যবেক্ষণ করা হয়। দেখা হয় হাসপাতালের লেবার রুম (প্রসব-ঘর), মেটারনিটি অপারেশন থিয়েটার (প্রসবের সময়ে ব্যবহৃত অস্ত্রোপচার-কক্ষ) কতটা পরিচ্ছন্ন, সেখানে চিকিৎসা-বিধি কতটা মেনে চলা হচ্ছে, প্রতি সপ্তাহে প্রসবের সংখ্যা কত, তার মধ্যে প্রসূতি বা শিশু-মৃত্যুর সংখ্যা কত, প্রসূতিদের প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ কীভাবে সামলানো হচ্ছে, প্রসূতির মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য কী ভাবে ভাল রাখা হচ্ছে-সহ সুস্থ সন্তান প্রসবের দিকগুলি। প্রথমে সেই সমস্ত মাপকাঠি খতিয়ে দেখে ফলাফল তৈরি করে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।
এর আগে রাজ্যে সেই প্রকল্পের ‘পাইলট’হিসেবে জাতীয় স্তরে আগেই স্বীকৃতি পেয়েছিল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
এ বার আরও দুই হাসপাতালের মুকুটে সেই পালক যোগ হল। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম জানান, বসিরহাট ও বারুইপুর হাসপাতাল ৮৭ থেকে ৯৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছে।
এই স্বীকৃতি অন্যান্য হাসপাতালকেও উৎসাহিত করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জানা যাচ্ছে, গত ডিসেম্বরে কেন্দ্রের এক প্রতিনিধিদল দুই হাসপাতালের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে। তাতে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতাল প্রসব-ঘরের ক্ষেত্রে ৯৪ শতাংশ এবং মেটারনিটি ওটি-র ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। অন্য দিকে, বসিরহাট জেলা হাসপাতাল প্রথমটিতে ৯০ শতাংশ ও দ্বিতীয়টিতে ৮৭ শতাংশ নম্বর পেয়েছে।