পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে তুরস্কে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৮ হাজার ৫৭৪ জনের। আর সিরিয়ায় মারা গেছেন কমপক্ষে দুই হাজার ৬৬২ জন মানুষ। হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দুটি দেশেরই ধসে পড়া হাজারো ভবনের ধ্বংসস্তুপে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা। বিভিন্ন দেশ থেকেও তাঁদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন হাজার হাজার উদ্ধারকর্মী।
তবে সেখানে অতিরিক্ত ঠাণ্ডার কারণে একদিকে উদ্ধার কাজ যেমন বিঘ্নিত হচ্ছে অন্যদিকে উদ্ধার হওয়া আহতদেরও স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। ভূমিকম্প আঘাত হানার পর থেকেই কিছু এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির চরম অভাব।
ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তিন মাসের জন্য রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। ১০টি প্রদেশকে দুর্যোগকবলিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেখানে বিধ্বংসী ভূমিকম্প এবং বেশ কয়েকটি আফটারশকের আঘাতে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে।
চারপাশে ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে বাঁচার আকুতি জানিয়ে যাচ্ছে অনেকে। সেই আকুতি কানে এলেও অনেক ক্ষেত্রেই কিছুই করতে পারছে না মুক্ত আকাশের নিচে থাকা স্বজনরা।
তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় হাতায় প্রদেশে ধ্বংসস্তূপের নিচে থাকা এক নারী সাহায্যের আর্তি জানাচ্ছিলেন। কিন্তু তাঁর আকুতি লোকে শুনতে পারলেও উদ্ধার করা যাচ্ছিল না। দানিজ নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, তারা শব্দ করছে, কিন্তু (উদ্ধারে) কেউ আসছে না।
দাতব্য সংস্থাগুলো বেশ উদ্বিগ্ন সেখানকার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে। বিশেষ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে আগে থেকেই ৪০ লাখের বেশি মানুষ চরম মানবিক সংকটে ভুগছিল। নতুন করে সৃষ্ট বিপর্যয় সামাল দিতে মানবিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাগুলো। কিছু কিছু সংস্থার পক্ষ থেকে ঘর হারা মানুষজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, দেয়া হচ্ছে খাবার, পানি ও শীতবস্ত্র। দুর্গত মানুষের আশ্রয়ের জন্য তুরস্কের বিভিন্ন স্থানে তিন লাখের বেশি তাঁবু সরবরাহ করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস বলেন, ‘এটি এখন সময়ের বিরুদ্ধে লড়াই। আমরা এখন আহত ও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে জরুরি চিকিৎসাদলের নেটওয়ার্ক সক্রিয় করেছি।’
ভূমিকম্পে দুই দেশে মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটি বলেছে, তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মানচিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে, এসব এলাকায় ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পের কারণে সেখানকার সবাই কোনো না কোনোভাবে সংকটে পড়েছেন। দুই দেশের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে লাখ লাখ মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে আছেন।